দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য স্বচ্ছ দৃষ্টি নিশ্চিত করতে ভিশনস্প্রিং এবং বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)-এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। গতকাল রাজধানীর উত্তরার বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
এই চুক্তির আওতায়, বিজিএমইএ সদস্য কারখানাগুলোতে এক বছরের মধ্যে ৫০ হাজার শ্রমিকের চোখের পরীক্ষা করবে ভিশনস্প্রিং। যেসব শ্রমিকের চশমার প্রয়োজন হবে (রিডিং গ্লাস ও প্রেসক্রিপশন উভয় ধরনের) তাদেরকে চশমা প্রদান করা হবে।
নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা সফলভাবে অর্জনের পর ভিশনস্প্রিং ও বিজিএমইএ’র যৌথ উদ্যোগে এ কর্মসূচি ধীরে ধীরে পুরো তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতে সম্প্রসারিত করা হবে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে বর্তমানে প্রায় ৪০ লাখেরও বেশি শ্রমিক কাজ করছেন, যাদের অধিকাংশকেই ক্ষুদ্র ও সূক্ষ্ম কাজ করতে হয় দীর্ঘ সময় ধরে। কিন্তু অনেক শ্রমিকই না জেনেই চোখের ঝাপসা দৃষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগছেন, যা উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয়, কর্মস্থলে ঝুঁকি বাড়ায় এবং দীর্ঘমেয়াদে চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ভিশনস্প্রিং-এর বৈশ্বিক তথ্য থেকে জানা যায়, চোখের দৃষ্টি সংশোধনের সরাসরি প্রভাব পড়ে কর্মক্ষমতা এবং আয়ের ওপর।
ভিশনস্প্রিং পরিচালিত দুটি ভিন্ন জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, শুধুমাত্র চশমা ব্যবহারে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা ২২–৩২ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দৃষ্টি সংশোধনের পর তাদের আয় গড়ে ৩৩ দশমিক ৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ’র সভাপতি ও রাইজিং ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান বলেন, আমাদের শ্রমিকদের জন্য চোখের স্ক্রিনিং সেবা নিয়ে আসায় আমরা ভিশনস্প্রিংকে ধন্যবাদ জানাই। স্বচ্ছ দৃষ্টি মানে নিরাপদ ও বেশি উৎপাদনশীল শ্রমিক। আমরা চাই প্রাথমিক অবস্থায়ই চোখের সমস্যা শনাক্ত হোক, যাতে তাদের দৃষ্টিশক্তি রক্ষা পায়। পাশাপাশি আমরা চাই এ উদ্যোগ শুধু গার্মেন্ট খাতেই সীমাবদ্ধ না থেকে গ্রামীণ এলাকাসহ অন্যান্য খাতেও সম্প্রসারিত হোক। বিজিএমইএ সদস্য কারখানাগুলোকে আমরা এ সাবসিডাইজড কর্মসূচিতে যুক্ত হতে উৎসাহিত করব, কারণ এতে নিয়োগকর্তাদের খরচ কম থাকবে, আবার শ্রমিকদের সুস্থতা ও উৎপাদনশীলতা দুটিই বাড়বে।
অনুষ্ঠানে ভিশনস্প্রিং বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মিশা মাজহাবীন বলেন, বাংলাদেশে আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক কারখানায় প্রায় অর্ধ মিলিয়ন (পাঁচ লাখের কাছাকাছি) শ্রমিকের চোখের পরীক্ষা করেছি এবং তাদের মধ্যে ৩০ শতাংশের বেশি শ্রমিকের চশমার প্রয়োজন ছিল এবং তারা চশমা পেয়েছেন। আমরা আরও বেশি কারখানায় এ সেবা পৌঁছে দিতে চাই। বিজিএমইএ তাদের শ্রমিকদের কল্যাণে যে উদ্যোগ নিয়ে সামনে এসেছে, তা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক।
২০০১ সাল থেকে ভিশনস্প্রিং নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে চশমা পৌঁছে দিতে কাজ করছে। কর্মস্থল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন কমিউনিটিতে সরাসরি চোখের পরীক্ষা ও চশমা সরবরাহের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি লাখো মানুষের কাছে পৌঁছেছে। বিভিন্ন খাতে তাদের এসব সহযোগিতা শ্রমিকদের সুস্বাস্থ্য ও উৎপাদনশীলতা উভয়ই বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
বিজিএমইএ এবং ভিশনস্প্রিং-এর এই সমঝোতা শ্রমিক কল্যাণকে সামনে রেখে কাজ করার একটি যৌথ অঙ্গীকারকেই প্রতিফলিত করে। গার্মেন্ট শ্রমিকদের মধ্যে দৃষ্টি সমস্যার ঝুঁকি কমানো, সাপ্লাই চেইনকে আরও শক্তিশালী করাসহ এর সুফল শ্রমিক, কারখানা ও সামগ্রিকভাবে জাতীয় অর্থনীতিতে পৌঁছে দেওয়াই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি ইনামুল হক খান, পরিচালক নাফিস-উদ-দৌলা, পরিচালক রুমানা রশিদ, পরিচালক সামিহা আজিমসহ সম্মানিত বোর্ড সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ভিশনস্প্রিং-এর অন্যান্য প্রতিনিধিরাও অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
বিডি-প্রতিদিন/শআ