বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প খাতকে সুসংগঠিত ও রপ্তানিমুখী শিল্পে রূপান্তর করতে হলে অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা, দক্ষ জনবল, কাঁচামালের বাড়তি খরচ, উৎপাদন অবকাঠামোর ঘাটতি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে দুর্বল ব্র্যান্ডিং—এ সব দীর্ঘদিনের সমস্যা কাটিয়ে ওঠা জরুরি।
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিকেএসএফ ভবনে ‘বাংলাদেশের হস্তশিল্পের বিকাশে করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা এ মন্তব্য করেন।
তারা বলেন, কয়েক শ কোটি টাকার দেশীয় বাজার ও বিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক বাজার থাকা সত্ত্বেও পরিকল্পিত উদ্যোগ, গবেষণা, ডিজাইন উন্নয়ন, নীতিগত সহায়তা ও শক্তিশালী বাজার সম্প্রসারণ ছাড়া খাতটির সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
বক্তারা সহজ শর্তে অর্থায়ন, ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস গড়ে তোলা, নকশা উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপন, কারিগরি প্রশিক্ষণ, রপ্তানি প্রচারণা ও বাজারসংযোগ জোরদারের সুপারিশ করেন।
পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদেরের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্থাটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আকন্দ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। হস্তশিল্প খাতের বর্তমান অবস্থা, বাজার সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উপমহাব্যবস্থাপক মো. হাবিবুর রহমান।
উপস্থাপনায় বলা হয়, দেশে প্রায় এক লাখ ৪৮ হাজার কারিগর হস্তশিল্পে যুক্ত আছেন, যাদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ নারী। উৎপাদনের ৯৫ শতাংশই গৃহভিত্তিক, যা গ্রামীণ অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে।
মো. ফজলুল কাদের বলেন, ‘সহজ শর্তে অর্থায়ন, কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং রপ্তানি সহজীকরণ নিশ্চিত করা গেলে হস্তশিল্প খাত নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থানে আরও বড় ভূমিকা রাখবে।’ তিনি সরকারি–বেসরকারি অংশীদারত্বে খাতটিকে টেকসই ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিল্পে গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
কর্মশালায় জানানো হয়, বাংলাদেশের হস্তশিল্পের স্থানীয় বাজারের বার্ষিক আকার ১০–১৫ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে ২০২৪ সালে বৈশ্বিক হস্তশিল্প বাজারের আকার ছিল ১ হাজার ১০৭ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু এই বিপুল বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারত্ব এখনো ১ শতাংশেরও কম। ২০২২–২৩ অর্থবছরে হস্তশিল্প রপ্তানি হয়েছে ২৯.৭৫ মিলিয়ন ডলার।
বক্তাদের তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক বাজার প্রতিবছর প্রায় ২০ শতাংশ হারে বাড়ছে এবং ২০৩২ সালে এটি ২.৪ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে।
কর্মশালায় বলা হয়, নকশিকাঁথা, মাটির তৈরি পণ্য, বাঁশ–বেত, জামদানি, পাটজাত পণ্য, টেরাকোটা—এসব পণ্যের প্রধান ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। দেশীয় কাঁচামাল দিয়ে উৎপাদিত এসব পণ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ মূল্য সংযোজন সম্ভব।
বক্তারা এ খাতের উন্নয়নে সাপ্লাই চেইন শক্তিশালীকরণ, কারুশিল্প গ্রাম উন্নয়ন, প্রণোদনা–সহায়তা, আন্তর্জাতিক মান ও সার্টিফিকেশন, ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস গড়ে তোলা এবং রপ্তানি সহজীকরণের ওপর জোর দেন।
বিডি-প্রতিদিন/সুজন