শৈশবের দুঃখ-কষ্ট, কৈশোরে বাবার পরিত্যাগ, যৌবনে স্বামীর অকাল মৃত্যু- সব মিলিয়ে জীবনের প্রতিটি ধাপেই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন লুকসানা বেগম (৩৬)।
অভাব-অনটন, সামাজিক অবহেলা এবং সংসারের দায় কাঁধে নিয়ে সংগ্রাম করতে করতে একসময় ঘর ছাড়েন জীবনের নতুন মোড়ের আশায়। কিন্তু বিদেশ গিয়েও জোটে নির্মমতা। সৌদি আরবে গৃহকর্মী হিসেবে যাওয়ার পর অমানবিক পরিশ্রম, অবহেলা ও খাবারের বঞ্চনার শিকার হন। মাত্র ১৫ দিনের মাথায় অসহনীয় পরিস্থিতিতে দেশে ফিরে আসেন তিনি।
লুকসানা সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দেওকলস ইউনিয়নের নয়া সৎপুর গ্রামের নাজির মিয়ার মেয়ে। দেশে ফিরে শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে ভেঙে পড়লেও হাল ছাড়েননি। পরে যুক্ত হন ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সঙ্গে। এখানে উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও আর্থিক সাক্ষরতা প্রশিক্ষণ নেন। ধীরে ধীরে মানসিক সংকট কাটিয়ে উঠে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। ব্র্যাকের উপকরণ সহায়তায় গড়ে তোলেন একটি মুদি দোকান- যা এখন তার পরিবারের প্রধান আয়ের উৎস।
দীর্ঘ সংগ্রাম জয়ের স্বীকৃতি হিসেবে সম্প্রতি বেগম রোকেয়া দিবসে লুকসানাকে ‘অদম্য নারী সম্মাননা’ প্রদান করে উপজেলা প্রশাসন। সেদিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে কুলসুম রুবি তার হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট, সনদ ও উপহার তুলে দেন।
লুকসানা বেগম বলেন, জীবনের কঠিন সময় পেরিয়ে আজ আমি ঘুরে দাঁড়িয়েছি। হার না মানা মনোবল, প্রবল ইচ্ছে আর সামান্য সহায়তা পেলেই জীবনের কষ্ট মাড়িয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা সম্ভব। আমার গল্প আরও দূর এগিয়ে নিতে চাই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে কুলসুম রুবি বলেন, লুকসানা বেগমের গল্প সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। তার সাফল্য অন্যদেরও উৎসাহ দেবে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ