বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসন বহাল রেখে হাই কোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনসহ (ইসি) গাজীপুর-৬ আসনের তিন সম্ভাব্য প্রার্থীর লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি) আবেদন ও একটি বিবিধ আবেদন খারিজ করে গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে হাই কোর্টের রায়ের ওপর আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতের দেওয়া স্থিতাবস্থার আদেশ বাতিল করা হয়েছে। আপিল বিভাগের এই আদেশের ফলে বাগেরহাটের পূর্বের চারটি সংসদীয় আসনই বহাল থাকল বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। আদালতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান (অ্যাটর্নি জেনারেল)। গাজীপুর-৬ আসনের প্রার্থীদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বদরুদ্দোজা বাদল, মুস্তাফিজুর রহমান খান ও বেলায়েত হোসেন। আর রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন। আদেশের পর রিটকারী পক্ষের আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে চারটি আবেদন খারিজ করায় সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসে ৪ সেপ্টেম্বর ইসির প্রকাশিত গেজেটের বাগেরহাট ও গাজীপুরের অংশ সম্পূর্ণ অবৈধ বলে ঘোষণা করা হলো। এর ফলে বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহালে হাই কোর্টের রায়ও বহাল থাকল। একই সঙ্গে আগামী সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের পাঁচটি আসনই থাকছে। আশা করছি জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে হাই কোর্টের রায় মেনে ইসি দ্রুত গেজেট প্রকাশ করবে।’
৪ সেপ্টেম্বর সংসদীয় আসনের চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে ইসি। ওই গেজেটে বাগেরহাট সদর, চিতলমারী ও মোল্লাহাট নিয়ে বাগেরহাট-১; ফকিরহাট, রামপাল ও মোংলা নিয়ে বাগেরহাট-২ এবং কচুয়া, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা নিয়ে বাগেরহাট-৩ আসন ঘোষণা করা হয়। বাগেরহাট-৪ আসন কেটে ওই গেজেটে গাজীপুর-৬ আসন করা হয়। এর আগে চিতলমারী-মোল্লাহাট-ফকিরহাট নিয়ে ছিল বাগেরহাট-১; বাগেরহাট সদর-কচুয়া নিয়ে ছিল বাগেরহাট-২; রামপাল- মোংলা নিয়ে ছিল বাগেরহাট-৩ এবং মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা নিয়ে ছিল বাগেরহাট-৪ আসন।
ইসির এ গেজেট চ্যালেঞ্জ করে বাগেরহাট প্রেস ক্লাব, জেলা আইনজীবী সমিতি, জেলা বিএনপি, জেলা জামায়াতে ইসলামী, জেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জেলা ট্রাক মালিক সমিতির পক্ষে দুটি রিট আবেদন করা হয়। রিটে বাগেরহাটে চারটি আসন বহাল রাখার নির্দেশনা চান রিট আবেদনকারীরা। এ রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানির পর ১৬ সেপ্টেম্বর হাই কোর্ট রুল দেন। রুলে চূড়ান্ত শুনানির পর গত ১০ নভেম্বর রায় দেন হাই কোর্ট। চারটি সংসদীয় আসন থেকে একটি কমিয়ে বাগেরহাটে তিনটি সংসদীয় আসন করার সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করা হয় রায়ে। ইসিকে নির্দেশ দেওয়া হয় পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহাল করে গেজেট প্রকাশ করতে।
পরে হাই কোর্টের এই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে ইসি ও গাজীপুর-৬ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী মো. সালাহ উদ্দিন। ১২ নভেম্বর আবেদন দুটি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওঠে। সেদিন আদালত আবেদনগুলো আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে হাই কোর্টের রায়ে স্থিতাবস্থা দেন। ৩ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশের পর গাজীপুর-৬ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি সরকার জাবেদ আহমেদ ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী হাফিজুর রহমানও আবেদন করেন। সব আবেদনে একসঙ্গে শুনানির পর আদেশ দিলেন সর্বোচ্চ আদালত।