নানান বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে অভিবাসনের ক্ষেত্রে ব্রিটেনের হোম অফিসে বাংলাদেশের নাম যুক্ত হয়েছে নেতিবাচক তালিকায়। গত কয়েক বছর ধরে ওয়ার্ক পারমিট কেলেংকারী, স্টুডেন্ট ভিসায় এসে ইউনিভার্সিটিতে না গিয়ে অ্যাসাইলাম নেওয়াসহ সর্বশেষ ব্রিটেনে আসার জন্য ইংরেজিতে দক্ষতা প্রদর্শনে ‘আইইএলটিএস’ পরীক্ষায় মান জালিয়াতিতে জড়িয়েছে বাংলাদেশের নাম। শিক্ষা ভিসা নিয়ে ব্রিটেন আসার পর ইউনিভার্সিটিতে না যাওয়ায় এর মধ্যে অন্তত ১৫ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে।
ব্রিটিশ দৈনিক টেলিগ্রাফ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ব্রিটিশ কাউন্সিল পরিচালিত ভাষাগত দক্ষতার ‘আইইএলটিএস’ পরীক্ষায় প্রায় ৮০ হাজার পরীক্ষার্থীকে ভুল ফল দেওয়া হয়েছিল, যার ফলে অনেক ব্যর্থ পরীক্ষার্থীও উত্তীর্ণ হিসেবে ভিসা পেয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করে। তবে বাংলাদেশের কতজন এ জালিয়াতির মাধ্যমে ব্রিটেনে এসেছেন প্রতিবেদনে সে সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি। এদিকে আইইএলটিএস পরীক্ষায় আলাদাভাবে গঠিত তদন্তে উঠে এসেছে, চীন, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের নাম। সেখানে বলা হয়েছে, একটি সংঘবদ্ধ চক্র পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করে অভিবাসীদের কাছে বিক্রি করেছে। ভিয়েতনামে এক পরীক্ষার আগ মুহূর্তে ব্রিটিশ কাউন্সিল পুরো সেশন বাতিল করে ব্যাকআপ পরীক্ষা নিতে বাধ্য হয়। কারণ ছিল সম্ভাব্য প্রশ্নফাঁস। চীনেও একই ধরনের প্রতারণার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ পুলিশ ইতোমধ্যে বাংলাদেশে প্রশ্নফাঁস চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা ১ হাজার পাউন্ড (১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা) থেকে ২ হাজার ৫০০ পাউন্ডের (৪ লাখ ১০ হাজার) বিনিময়ে আইইএলটিএস প্রশ্ন বিক্রি করছিল বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ইংরেজি ভাষা পরীক্ষায় ‘আইইএলটিএস’ দেওয়া অনেক স্কোর ভুল ছিল। ব্রিটিশ কাউন্সিল, ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস অ্যান্ড অ্যাসেসমেন্ট এবং আইডিপি যৌথভাবে ওই ‘আইইএলটিএস’ পরিচালনা করে। আইইএলটিএস কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘একটি প্রযুক্তিগত সমস্যার’ কারণে লিসেনিং ও রিডিং অংশে ভুল স্কোর তৈরি হয়েছিল। তাদের হিসেবে মাত্র ১ শতাংশ পরীক্ষায় এ সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু এই ১ শতাংশের সুবিধাভোগীর সংখ্যাটা দাঁড়ায় প্রায় ৭৮ হাজার।
সম্প্রতি বিষয়টি ধরা পড়ার পর আইইএলটিএস সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীদের নতুন স্কোর পাঠিয়ে ক্ষমা প্রকাশ করে। এ দীর্ঘ বিলম্বের ফলে ভুলভাবে উত্তীর্ণ হওয়া বহু পরীক্ষার্থী ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যের স্টুডেন্ট ভিসা, ওয়ার্ক ভিসা, এমনকি ‘এনএইচএসে’ চাকরি নিয়ে সেখানে অবস্থান করছে। এদিকে করোনার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘এনএইচএসে’ এমন কর্মী আছেন যাদের ইংরেজি দক্ষতা এতই কম যে রোগীর জীবন বিপন্ন হতে পারে।
সমালোচনা ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া : যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টি বলেছে, যারা ইংরেজি পরীক্ষায় প্রকৃতপক্ষে উত্তীর্ণ হয়নি, তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। এ বিষয়ে শ্যাডো হোম সেক্রেটারি ক্রিস ফিলিপ বলেন, ‘ইংরেজি না জানা প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ ইতোমধ্যে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে বাস করে। এর মধ্যে আরও ৭৮ হাজার জন ভুল পরীক্ষার কারণে অপরিকল্পিতভাবে ভিসা পেয়েছে, এটা বিপর্যয়।’ তিনি আরও বলেন, ইংরেজি না জানলে অভিবাসীরা সমাজে একীভূত হতে পারে না এবং রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, কিছু ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ছাত্র ভর্তিতে সাময়িক স্থগিতাদেশ দিয়েছে, কারণ অনেক ক্ষেত্রে ভিসা সিস্টেমের অপব্যবহার ও ভাষা দক্ষতার অপ্রতুলতা দেখা যাচ্ছে।