রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার শাহজাহান রোডের একটি বাসার সপ্তম তলায় মা লায়লা ফিরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) হত্যার ঘটনায় কথিত গৃহকর্মী আয়েশাকে আসামি করে মামলা হয়েছে। সোমবার রাতে লায়লা ফিরোজের স্বামী আ জ ম আজিজুল ইসলাম মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। এদিকে নাটোরের এনএস সরকারি কলেজ মাঠে গতকাল বাদ জোহর জানাজা নামাজ শেষে শহরের গাড়ীখানা গোরস্তানে মা-মেয়েকে দাফন করা হয়েছে। এর আগে ভোর ৫টায় লাশবাহী ফ্রিজিং ভ্যানে করে নাটোর পৌরসভার দক্ষিণ বড়গাছার নিজ বাসভবনে নেওয়া হয়। তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাত্র চার দিন আগে ওই বাসায় কাজ নেন আয়েশা। পঞ্চম দিনের মাথায় হত্যা করা হয় মা-মেয়েকে। বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় স্কুল ড্রেস পরে কেন বের হয়েছিলেন আয়েশা, কীসের ক্ষোভ থেকে তাঁদের হত্যা করা হয়-এসব বিষয় সামনে রেখে তাঁরা কাজ করছেন। আয়েশাকে ধরতে পারলে হত্যার আদ্যোপান্ত জানা যাবে। এজাহারে আজিজুল ইসলাম উল্লেখ করেন, তিনি পেশায় শিক্ষক এবং শাহজাহান রোডের ৩২/২/এ নম্বর বাসার (৭/বি) ওই ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। চার দিন আগে আয়েশা খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে সেখানে কাজ শুরু করেন। সোমবার সকাল ৭টার দিকে তিনি কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে গিয়ে স্ত্রীকে একাধিকবার ফোন করে না পেয়ে বেলা ১১টার দিকে বাসায় ফিরে দেখেন স্ত্রী গলা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। মেয়ে নাফিসা গুরুতর জখম হয়ে মেইন গেটের দিকে পড়ে ছিল। পরিচ্ছন্নতা কর্মী আশিকের সহায়তায় মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বাসার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গৃহকর্মী আয়েশা সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে বাসায় ঢোকেন এবং সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে মেয়ের মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে চলে যান।
পুলিশ ও মর্গ সূত্রে জানা গেছে, লায়লার শরীরে প্রায় ৩০টি ও নাফিসার শরীরে ৬টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। নাফিসা মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গৃহকর্মী চুরির উদ্দেশ্যে মা-মেয়েকে হত্যা করতে পারেন। বাসায় কাজের সময় বকাঝকা বা মারধরের ঘটনা থেকে ক্ষোভও গৃহকর্মীর মধ্যে জন্ম নিতে পারে। নিহতদের স্বজনরা গ্রামের বাড়ি নাটোর থেকে ফিরলে সেটি জানা যাবে। এ ছাড়া অন্য কোনো কারণ আছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মো. ইবনে মিজান জানান, প্রাথমিক ধারণা চুরির উদ্দেশ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না তাকে (গৃহকর্মী আয়েশা) গ্রেপ্তার করতে পারলে জানা যাবে।