চাপ বেড়েছে সরকারের পরিচালন ব্যয়ে। অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেই বরাদ্দের অর্ধেকের বেশি শেষ হয়ে গেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এই চাপ আরও বাড়তে পারে। কয়েক বছর ধরে প্রকল্পের জন্য নতুন গাড়ি কেনা বন্ধ রয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে বন্ধ রয়েছে সরকারি চাকুরেদের বিদেশ ভ্রমণ। তারপরও অনুন্নয়ন ব্যয়ের লাগাম টানতে পারছে না সরকার। অন্যদিকে মন্থর উন্নয়ন ব্যয়ের গতি। সংশোধিত বাজেটে পরিচালন ব্যয়ের বরাদ্দ আরও বাড়তে পারে। অনুন্নয়ন ব্যয়ের সঙ্গে উন্নয়ন ব্যয়ের সংগতি রেখে সংশোধিত বাজেট চূড়ান্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সম্প্রতি সচিবালয়ে সরকারের আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হার-সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সভার কার্যবিবরণী ঘেঁটে এসব তথ্য জানা গেছে।
সুদ পরিশোধ ও ভর্তুকি খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, ব্যাংক একীভূতকরণে মূলধন সহায়তা এবং সরকারি চাকরিজীবীদের বিভিন্ন ভাতা বাড়ানোর কারণে পরিচালন ব্যয়ের আকার মূল বাজেটে ঘোষিত অঙ্কের চেয়ে কিছুটা বাড়তে পারে। সামগ্রিক মূল বাজেট খুব একটা কাটছাঁট হবে না। আগের অর্থবছরের তুলনায় কমিয়ে ধরা উন্নয়ন বাজেটে আরেক দফা ছুরি চালানো হবে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সরকারি ব্যয় আগের অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৯৮ কোটি টাকা। প্রথম প্রান্তিকে সুদ এবং ভর্তুকির জন্য ৫৪ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। যা মোট পরিচালন ব্যয়ের প্রায় ৫৫ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেই পরিচালন ব্যয় বরাদ্দের অর্ধেকের বেশি অর্থ ব্যয় করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এডিপি বাস্তবায়ন কম হওয়ার পেছনে একটা কারণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। তার চেয়েও বড় কারণ- সরকার উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ কমিয়েছে। যেটুকু রাখা হয়েছে, তা-ও নানান কারণে খরচ করতে পারছে না। পরিচালন খাতের ব্যয় চাইলেও আটকে রাখা যায় না। তাই বেড়েছে। এটি আরও বাড়বে বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।
দেশের বর্তমান আর্থিক চিত্র অনুযায়ী, সরকার ঋণ পরিশোধের চাপ সামলাতে গিয়ে উন্নয়ন ব্যয় বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়ছে। রাজস্ব ব্যয় অপ্রযোজ্য খাতে বাড়ছে। সামাজিক খাত, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোতে বিনিয়োগের ঘাটতি বাড়ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্য আরও ঝুঁকিতে পড়বে। বাধাগ্রস্ত হবে প্রবৃদ্ধি অর্জন। চলতি বাজেটে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য কমিয়ে ধরা হয়েছে। বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে। যদিও সরকার এ ব্যাপারে এখনো তেমন সাফল্য দেখাতে পারেনি। অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের পরিকল্পনা থাকায় চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে বাজেট সংশোধন চূড়ান্ত করবে সরকার। এরই মধ্যে সব মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের কাছ থেকে সংশোধিত বরাদ্দ প্রস্তাব জমা নিয়েছে অর্থ বিভাগ।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার পর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনের পাশাপাশি কয়েকটি ভাতা বাড়ানো হয়েছে। সম্প্রতি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ানো হয়েছে।
ফলে পরিচালন ব্যয় প্রায় চার হাজার কোটি টাকা বাড়বে। চাপ কমাতে অন্তর্বর্তী সরকার বেতন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন থেকে পিছিয়ে এসেছে। বলা হয়েছে, নতুন বেতনকাঠামো বাস্তবায়ন করবে নির্বাচিত সরকার। অন্তর্বর্তী সরকার ফ্রেমওয়ার্ক দিয়ে যাবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের জন্য বাজেটে প্রাক্কলনের চেয়ে ব্যয় বাড়তে পারে। নির্বাচন কমিশনের জন্য প্রায় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত তহবিল লাগতে পারে। পাঁচটি সমস্যাগ্রস্ত ইসলামি ব্যাংককে একীভূত করে নতুন ব্যাংককে ২০ হাজার কোটি টাকা মূলধন জোগান দিতে হচ্ছে। এসব কারণেই সরকারের পরিচালন ব্যয় বাড়ছে।