ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে প্রশাসন সাজাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। মাঠ প্রশাসনে জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের সময় ডিসিরা রিটার্নিং অফিসার ও ইউএনওরা সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিযুক্ত হন। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও নতুন ডিসি ইউএনওর কাঁধে থাকবে সুষ্ঠু ভোটের চ্যালেঞ্জ। নতুন কর্মকর্তারা জেলা-উপজেলায় যোগ দিয়ে নিজের আওতাধীন এলাকার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। নির্বাচনের কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে সে বিষয়েও তারা কাজ শুরু করেছেন বা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর নতুন কর্মকর্তাদের ঘাড়ে বড় চ্যালেঞ্জ এই জাতীয় নির্বাচন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনে জেলা-উপজেলায় নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরও নিয়োগ দেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই ৫০ জন নতুন ডিসি বিভিন্ন জেলায় নিয়োগ পেয়ে কাজ শুরু করেছেন। অনেক ডিসির জেলা পরিবর্তন হয়েছে। পাশাপাশি দেড় শতাধিক ইউএনও সোমবার কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। সূত্র জানায়, ডিসি ও ইউএনও হিসেবে মাঠে যাচ্ছেন একেবারেই নতুন কর্মকর্তারা। যারা আগে ডিসি বা ইউএনও ছিলেন না। ২৫, ২৭, ২৮ এবং ২৯ ব্যাচের কর্মকর্তারা ডিসির দায়িত্বে আছেন। ডিসিদের জেলা পরিবর্তন হয়েছে বা আগের জেলাতেই আছে এরকম কর্মকর্তার সংখ্যা মাত্র কয়েকজন। বেশির ভাগ কর্মকর্তা নতুন হওয়ায় এখন জেলার সার্বিক তথ্য সংগ্রহ করছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জেনে নিচ্ছেন। একই চিত্র ইউএনওদের ক্ষেত্রেও। পুরোনো ইউএনও যারা দায়িত্ব পালন করছেন তারা ছাড়া সবাই নতুন হিসেবে মাঠে যাচ্ছেন। নির্বাচনের আগে আগামী দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে পুরো উপজেলার চিত্র জানাতে হবে। এদিকে ইউএনও হিসেবে ৩৭ ব্যাচকে মাঠে পাঠিয়েছে সরকার। এই ব্যাচের কর্মকর্তাদের বেশির ভাগের ধারণা ছিল, তাদের ইউএনও হিসেবে পদায়ন করা হবে না। নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর সিনিয়র কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিচ্ছেন অনেকেই। উল্লেখ্য, দেশের বিভিন্ন উপজেলায় দায়িত্ব পালন করা ১৫৮ ইউএনওকে প্রত্যাহার করে মন্ত্রণালয় বিভাগ বা অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সোমবার রাতে আরও ৭৭ ইউএনওকে পদায়ন করা হয়েছে। তাদের শিগগিরই মাঠে পাঠানো হবে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়েই জাতীয় নির্বাচনের কাজ সম্পন্ন করা হয়। যদিও এবার ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারা রিটার্নিং অফিসার হওয়ার দাবি করেছিলেন। মাঠ প্রশাসনে ডিসির জেলা ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা ও লজিস্টিক সাপোর্টিং থাকায় বরাবরই তাদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেয় ইসি। এবারের ভোটে দেশ-বিদেশের বেশি নজর থাকায় মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও বেশ চিন্তিত। কেউ কেউ চাপও অনুভব করছেন।
নিজ আওতাধীন এলাকায় কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটলেই দায় ডিসি বা ইউএনওকে নিতে হয়। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে অনেক কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়ে থাকে। এবার সে আশঙ্কা আরও বেশি। সে কারণে জেলায় সুষ্ঠু ভোট করতে নানা কার্যক্রম শুরু করেছেন ডিসিরা। ইতোমধ্যেই জেলাগুলোতে মতবিনিময়সহ স্থানীয় চ্যালেঞ্জগুলো খুঁজে বের করছেন কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম বিভাগের একটি জেলার ডিসি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পদ পাওয়া খুশির বিষয়। এবারের নির্বাচনে ভোটের অধিকারের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। জেলার চ্যালেঞ্জ জানা এবং করণীয় ঠিক করছি। বরিশাল বিভাগের এক ডিসি বলেন, ভোটের সময় দায়িত্বও বেশি। সরকারের গাইডলাইন মেনে কাজ করছি। সদ্য দায়িত্ব পাওয়া একাধিক ইউএনও বলেন, আগে ইউএনও ছিলাম না। ইউএনওর দায়িত্বের পাশাপাশি রিটার্নিং অফিসার হিসেবে আমার কী করণীয় সেটি অনুসরণ করব। ভোটের সময় যেহেতু ইসির অধীন থাকব; তাই তাদের নির্দেশনা মেনে চলব। কয়েকজন ইউএনও বলেন, আমরা এ সময় মাঠে আসতে চাইনি। আমাদের ধারণা ছিল, সিনিয়র যারা মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের দিয়েই সরকার ভোট করবে। চেষ্টা করব সিনিয়রদের পরামর্শে ভালো কিছু করতে।
নির্বাচনে ডিসি ইউএনওদের দায়িত্ব ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে জানতে চাইলে সাবেক সচিব ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ এ কে এম আউয়াল মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ আছে তবে অসুবিধা হবে না। কারণ এবার প্রস্তুতিটাও ভালো থাকবে। সাবেক এই সচিব আরও বলেন, সব তত্ত্বাবধায়ক আমলেই নতুন কর্মকর্তা দেওয়া হতো। নানাভাবে ডিসি-ইউএনও বাছাই নিয়ে নানা তথ্য শোনা যাচ্ছে। যদি ডিসি বা ইউএনও বাছাইটা সঠিক পদ্ধতিতে হয়ে থাকে তাহলে সব কাজ সামলাতে পারবে। কারণ কথায় আছে, প্রশাসনের কমকর্তারা কোনো বিষয়ে বড় বিশেষজ্ঞ নয়, তবে তারা সব কাজের কাজি। জানা গেছে, নির্বাচন পরিচালনার সব দায়িত্ব রিটার্নিং কর্মকর্তার। তার অধীনেই হয় আইনশৃঙ্খলাসহ ভোটের যাবতীয় কার্যক্রম। নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা ও আচরণবিধি অনুযায়ী কাজ করেন রিটার্নিং অফিসার। ইসির তত্ত্বাবধান, নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণ সাপেক্ষে রিটার্নিং অফিসার নির্বাচন পরিচালনার সব কাজ তত্ত্বাবধান করবেন। আর ইসির অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করবেন।