ইসলামের ইতিহাসে কাফিরদের দিকে সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপকারী, আশারায়ে মুবাশ্শারার মধ্যে সর্বশেষ ইন্তেকালকারী সাহাবি সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)। তাঁর উপনাম আবু ইসহাক। পিতার মূল নাম মালিক ইবনে উহাইব; তবে প্রসিদ্ধ আবু ওয়াক্কাস। মা হামনাহ বিনতে সুফয়ান ইবনে উমাইয়া ইবনে আবদে শামস।
মক্কার বিখ্যাত ‘কুরাইশ’ গোত্রের ‘বনু জুহরা’ শাখার সন্তান। (আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা : ৩/১০১)
তিনি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ সাহাবির একজন এবং তৃতীয় খলিফা নির্বাচনের জন্য ওমর (রা.) কর্তৃক গঠিত ৬ সদস্যবিশিষ্ট শূরা-কমিটির অন্যতম সদস্য। তিনি একজন বীর যোদ্ধা, অশ্বচালক। শীর্ষস্থানীয় অনুসৃত ব্যক্তিত্বের অধিকারী।
মুসতাজাবুদ দাওয়াত (যার দোয়া অবশ্যই কবুল হয়)। মাদাইন-বিজেতা। কূফা নগরীর রূপকার এবং সে-নগরীর পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় খলীফার নিযুক্ত গভর্নর। অবশ্য, উভয় খলীফা তাঁকে (তাঁর দোষে নয়, ভিন্ন কারণে) বরখাস্ত করেন। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৮/৭২)
মহানবী (সা.)-এর প্রতি তাঁর আন্তরিকতা ও ভালোবাসা ছিল অত্যন্ত গভীর। একদা রাতের বেলা রাসুল (সা.) কোনো এক যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তনকালে এমন এক জায়গায় অবস্থান করলেন, যেখানে শত্রুপক্ষের আক্রমণের আশঙ্কা ছিল প্রবল। তাই প্রিয় নবী (সা.) দীর্ঘ সময় নিদ্রাহীন জেগে থাকলেন। অবশেষে ইরশাদ করলেন, যদি আমার সঙ্গীদের মধ্যে কোনো সৌভাগ্যবান এই রজনীতে পাহারাদারির জন্য প্রস্তুত থাকত (তবে খুব ভালো হত)! আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) এ কথা শেষ করতে না করতেই অস্ত্রের ঝনঝনানি কানে ভেসে এল। রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, কে? সাদ (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আজ রাত আমি আপনার পাহাদারির জন্য প্রস্তুত।
অতপর রাসুল (সা.) ঘুমিয়ে পড়লেন। সাদ (রা.) প্রিয় নবীকে পাহারা দিলেন। রাসুল (সা.) তাঁর জন্য প্রাণ ভরে দোয়া করলেন। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৮/৭৩)
মহানবী (সা.)-ও তাঁকে ভালোবাসতেন। একবার সাদ (রা.) হুনাইন যুদ্ধের সময় মক্কায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাসুল (সা.) জিইররানা থেকে ওমরাহর ইহরাম করার পর তাঁকে দেখতে যান। তখন তিনি রাসুল (সা.)-কে বললেন, হে আল্লাহর! যে-দেশ থেকে আমি হিজরত করেছি, তাতে আমি মৃত্যুর আশঙ্কা করছি। আপনি আমার জন্য দোয়া করুন, আল্লাহ যেন আমাকে দ্রুত আরোগ্য দান করেন। রাসুল (সা.) তাঁর সুস্থতার জন্য তিন বার দোয়া করলেন। অতপর তিনি রাসুল (সা.)-কে ওসিয়ত করে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার অনেক সম্পদ আছে। ওয়ারিস বলতে আমার কেউ নেই একটি মাত্র মেয়ে ছাড়া। আমি কি তার দুই তৃতীয়াংশ সদকার অসিয়ত করতে পারি? ইরশাদ করলেন, না। বলেন, তাহলে অর্ধেকের? ইরশাদ করলেন, না। বলেন, তাহলে এক তৃতীয়াংশের? ইরশাদ করলেন, তৃতীয়াংশ! তাও তো অনেক। তবে মনে রেখো! তুমি তোমার সন্তানকে মানুষের কাছে হাত পাতার মতো হতদরিদ্র অবস্থায় রেখে যাওয়া অপেক্ষা তাদের স্বনির্ভর রেখে যাওয়াই উত্তম। এরপর রাসুল (সা.) এর দোয়ায় তিনি সুস্থ হন এবং আরও ৪৭ বছর হায়াত লাভ করেন। (আত-ত্বাবাকাতুল কুবরা : ৩/১০৭—১০৮; সিয়ারু আলামিন নুবালা : ৩/৮২)
বিডি প্রতিদিন/মুসা