সুরার নামকরণ আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে জীবজন্তুর নামে অনেক সুরার নামকরণ করেছেন। যেমন সুরা বাকারা (গরু), সুরা আনআম (চতুষ্পদ প্রাণী), সুরা নাহল (মৌমাছি), সুরা আনকাবুত (মাকড়সা), সুরা ফিল (হাতি), সুরা নামল (পিঁপড়া) ইত্যাদি। আল্লাহতায়ালা বলেন, তিনিই চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য শীত থেকে বাঁচার উপকরণ এবং তা ছাড়া আরও বহু উপকার এবং তা থেকেই তোমরা ভক্ষণ করো। তোমরা সন্ধ্যাকালে যখন সেগুলোকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনো এবং ভোরবেলা যখন সেগুলোকে চারণভূমিতে নিয়ে যাও, তখন তার ভিতর তোমাদের জন্য দৃষ্টিনন্দন শোভাও রয়েছে। এবং তারা তোমাদের ভার বয়ে নিয়ে যায় এমন নগরে, যেখানে প্রাণান্তকর কষ্ট ছাড়া তোমরা পৌঁছতে পারতে না। প্রকৃতপক্ষে তোমাদের প্রতিপালক অতি মমতাময়, পরম দয়ালু। (সুরা নাহল : ৫-৭)
জীবজন্তুকে কষ্ট না দেওয়া জীবজন্তুর প্রতি ইসলামপ্রদত্ত প্রধান ও মৌলিক অধিকার। একটি ঘটনা তার জ্বলন্ত প্রমাণ হজরত জাবের (রা.) বর্ণনা করে বলেন, রসুল (সা.) একবার একটি গাধার সামনে দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। গাধাটির মুখের ওপর আঘাতের দাগ ছিল। এটা দেখে তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি এটাকে দাগ দিয়েছে, আল্লাহ তাকে অভিশপ্ত করুন’ (সহিহ মুসলিম : ২১১৭)।
হজরত জাবের (রা.) অন্য আরেকটি বর্ণনায় বলেন, রসুল (সা.) প্রাণীদের মুখের ওপর মারতে ও দাগ দিতে নিষেধ করেছেন (সহিহ ইবনে খুযাইমা-২৩৪৯)।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি পশুর অঙ্গ বিকৃতি ঘটায়, রসুল (সা.) তার ওপর অভিসম্পাত করেছেন। (সহিহ বুখারি : ৫৫১৩)
রসুল (সা.) জীবজন্তুর অধিকার প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে জীবজন্তুকে আটক করে ক্ষুধার্ত রাখা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এক মহিলাকে একটি বিড়ালের কারণে আজাব দেওয়া হয়। সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল অবশেষে বিড়ালটি ক্ষুধার কারণে মারা যায়। সে তাকে খাদ্য-পানিও দেয়নি আবার ছেড়েও দেয়নি, যাতে সে জমিনের পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে।’ (সহিহ বুখারি : ২৩৬৫)
হজরত সাহল ইবনে হানজালিয়া (রা.) বর্ণনা করে বলেন, একবার রসুল (সা.) এমন একটি উটের পাশ নিয়ে যাচ্ছিলেন, অনাহারে যার পেট ও পিঠ প্রায় একত্র হয়ে গিয়েছিল। তা দেখে রসুল (সা.) বললেন, ‘তোমরা এ বোবা পশুদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। সেবাযত্নের মাধ্যমে এগুলোতে আরোহণ করো এবং সেবাযত্নের পরই এদের ভক্ষণ করো।’ (সুনানে আবু দাউদ : ২৫৪৮)
রসুল (সা.) আদেশ করেছেন, যে পশুকে আল্লাহতায়ালা মানুষের যে ধরনের উপকারের জন্য সৃষ্টি করেছেন, তার থেকে শুধু সেই ধরনের উপকার গ্রহণ করবে। তিনি প্রাণী ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্যও নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের ভারবাহী পশুর পিঠে মিম্বর বানিয়ে বসে থাকা পরিত্যাগ করবে (অর্থাৎ বিনা প্রয়োজনে এর পিঠে বসে থাকবে না)। আল্লাহতায়ালা তাদের তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা প্রাণান্তকর কষ্ট ব্যতীত যেখানে পৌঁছতে পারতে না, সেখানে তারা তোমাদের সহজে পৌঁছে দিতে পারে।’ (সুনানে আবু দাউদ : ২৫৬৭)
অসহায় জীবজন্তুর সেবা অত্যন্ত পুণ্যময় একটি আমল। আল্লাহ এই আমলটি খুব পছন্দ করেন। প্রাণীর সেবায় জান্নাত প্রাপ্তির সৌভাগ্য অর্জিত হয়। হাদিস শরিফে এ-সংক্রান্ত চমৎকার একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। রসুল (সা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। এ সময় তার তীব্র পিপাসা লাগে এবং সম্মুখেই সে একটি কূপ দেখতে পায়। লোকটি তাতে নেমে পানি পান করে। তারপর উঠে এসে সে দেখতে পায় পাশেই একটি কুকুর হাঁপাচ্ছে। পিপাসায় কাতর হয়ে জিহ্বা বের করে কাদা চাটছে। লোকটি ভাবে, নিশ্চয় এই কুকুরটি পিপাসায় তেমনই কষ্ট পাচ্ছে, যেমন কষ্ট আমার হয়েছিল। তখন সে আবার কূপে নেমে তার মোজার মধ্যে পানি ভরে। তারপর মুখ দিয়ে (কামড় দিয়ে) ধরে ওপরে উঠে আসে। এভাবে সে কুকুরটিকে পানি পান করায়। আল্লাহ এতে খুশি হন এবং তাকে মাফ করে দেন।’
সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রসুল, জীবজন্তুর প্রতি সদাচরণেও কি আমাদের জন্য পুরস্কার রয়েছে?’ উত্তরে রসুল (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ প্রতিটি আর্দ্র হৃদয়ের (প্রাণবিশিষ্ট) অধিকারীর ক্ষেত্রেই পুরস্কার রয়েছে।’ (সহিহ বুখারি : ৫৬৬৩)