দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে ভারতের দীর্ঘদিনের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে নতুন আঞ্চলিক জোট গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন, বাংলাদেশ ও চীনের সঙ্গে তাদের বিদ্যমান ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগকে অন্যান্য আঞ্চলিক ও বাইরের দেশগুলোর অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে আরও সম্প্রসারিত করার চেষ্টা করছে ইসলামাবাদ।
গত সপ্তাহে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী দার দীর্ঘদিনের অকার্যকর সার্কের বিকল্প হিসেবে একটি নতুন আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্ম তৈরির কথা বলেন। পারমাণবিক ক্ষমতাধর প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের চার দিনের সামরিক সংঘাতের পর উত্তেজনা তুঙ্গে রয়েছে। দার বলেন, দক্ষিণ এশিয়া জিরো-সাম মানসিকতা, রাজনৈতিক বিভাজন এবং অকার্যকর আঞ্চলিক কাঠামোর জালে আর আটকে থাকতে পারে না। তিনি উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আঞ্চলিকতাবাদের আহ্বান জানিয়েছেন এবং ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ইসলামাবাদ সার্কের বাইরে উদীয়মান বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য সমর্থন পাচ্ছে।
পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও চীন চলতি বছরের প্রথম দিকেই পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য একটি ত্রিপক্ষীয় প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করেছে, যার প্রথম বৈঠক জুনে চীনের কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়। দার বলেছেন, এই ধারণাটিকে সম্প্রসারিত করা যেতে পারে এবং আঞ্চলিক অগ্রাধিকার কারো অনমনীয়তার কাছে জিম্মি হওয়া উচিত নয়, যা ছিল ভারতের প্রতি তার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত।
১৯৮৫ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত সার্কের মূল লক্ষ্য ছিল সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, সামাজিক অগ্রগতি ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নকে উৎসাহিত করা। এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিল ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কা; পরে ২০০৭ সালে আফগানিস্তান যুক্ত হয়। তবে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার কারণে এই জোটটি প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ২০১৬ সালে উরি হামলার পর ভারতের আপত্তিতে বাতিল হওয়ার পর থেকে সার্কের কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। এর ফলে ভারত এখন পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে বিমসটেক (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন) জোটের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছে।
সার্কভুক্ত দেশগুলো বিশ্বের দুই শ' কোটির বেশি জনসংখ্যার বাসস্থান হলেও বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই অঞ্চলের আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য মাত্র ২৩ বিলিয়ন ডলার। যা মোট বাণিজ্যের প্রায় ৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক অনুমান করে, বাণিজ্য বাধা কমলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ৬৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আদান-প্রদান করতে পারত, যা বর্তমান বাণিজ্যের তিনগুণ।
লাহোর-ভিত্তিক শিক্ষাবিদ রাবিয়া আখতারের মতে, পাকিস্তানের এই প্রস্তাব বর্তমানে কার্যকর হওয়ার চেয়ে আকাঙ্ক্ষামূলকই বেশি। তিনি বলেন, এটি কেবল আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রক্রিয়াকে বহুমুখী করার জন্য পাকিস্তানের ইচ্ছাকেই নির্দেশ করে। এই প্রস্তাবের সফলতা দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে: প্রথমত, সম্ভাব্য সদস্য রাষ্ট্রগুলো ছোট, ইস্যু-কেন্দ্রিক গোষ্ঠীগুলোতে কোনো কার্যকারিতা খুঁজে পায় কিনা এবং দ্বিতীয়ত, এই উদ্যোগে অংশগ্রহণ ভারতের সাথে তাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক মূল্য তৈরি করে কিনা।
সূত্র: এনডিটিভি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল