প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে মেহেরপুর পৌরসভার ভূগর্ভস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণের তিন বছর পার হলেও এখনো চালু হয়নি। অথচ দীর্ঘদিন ধরে দুর্গন্ধযুক্ত, নোংরা পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে পৌর এলাকার লক্ষাধিক মানুষ। অনেক সময় লাইনের পানির সঙ্গে কেঁচোও বের হয়। এ পানি ব্যবহার করায় চর্ম, পেটের পীড়াসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই। সংশ্লিষ্টরা জানান, পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পশুহাটের পাশে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে পানি শোধনাগার নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের এপ্রিলে তা সম্পন্ন হয়। দুই বছরের ট্রায়াল শেষে ২০২৪ সালের নভেম্বরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই) এটি পৌরসভায় হস্তান্তর করে। কিন্তু বছর পার হলেও শোধনাগারটি চালু হয়নি। ব্যবহার না হওয়ায় এর ট্যাংক, পাইপলাইন, জেনারেটরসহ বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পৌর এলাকার বাসিন্দারা জানান, পৌরসভা থেকে সরবরাহ করা পানি নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত; যা তারা প্রতিদিনই পাচ্ছেন। পানিতে কেঁচো, ময়লা ও কাদা থাকে। বাধ্য হয়ে তারা দূর থেকে ফিল্টার করা পানি এনে পান করছেন।
কলেজপাড়ার খাদিজা আক্তার বলেন, ‘লাইনে পানির সঙ্গে কেঁচো বের হয়। দুর্গন্ধ তো নিত্যসঙ্গী। এভাবে আর কত দিন চলবে?’ রেশমি খাতুন বলেন, ‘পৌর পানি সরবরাহ লাইনে ভালো পানি পাই না। তাই ডিপিএইচইয়ের ফিল্টার করা পানি কিনে খেতে হয়।’ ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রহমতুল্লাহ বলেন, ‘এ নোংরা পানি ব্যবহার করে চর্মরোগ, পেটের অসুখ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে আমরা ব্যবহার করছি। অথচ কোটি কোটি টাকার শোধনাগারটি অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’ স্থানীয়দের অভিযোগ, অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতায় সরকারি এত মূল্যবান স্থাপনা পৌরবাসীর কোনো কাজে আসছে না। অন্যদিকে পরিষ্কার পানির অভাবে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। মেহেরপুর পৌরসভার প্রকৌশলী আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘শোধনাগার চালানোর মতো প্রশিক্ষিত জনবল নেই। এ ছাড়া যান্ত্রিক ত্রুটিও রয়েছে। পাইপলাইন ব্লক হয়ে গেছে, কোথাও লিকেজ, কোথাও আবার ফেটে যাচ্ছে। তাই চাপ দিলে পানি ধরে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ডিপিএইচইকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। দ্রুত সমস্যা সমাধান করে শোধনাগার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
মেহেরপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন বলেন, ‘শোধনাগারটি আমরা পৌরসভায় হস্তান্তর করেছি। রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্ব এখন পৌরসভার। তবে পাইপলাইনের কিছু স্থানে মেরামতের প্রয়োজন আছে, এ কারণেই হয়তো তারা বিলম্ব করছে।’