সামাজিক সুরক্ষার কর্মসূচির প্রকল্প বাস্তবায়নসহ আইন ও প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন গলদ থাকায় দরিদ্রতার হার কমছে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘দেশে এখন এত বেশি দরিদ্র যে এটাকে তো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে প্রথমে। আমি মনে করি সবচেয়ে বেশি দুর্বলতা বাস্তবায়নে। আমাদের এখানে বাস্তবায়ন এত খারাপ। কিছু কাজ খুবই ভালো কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। এখানে গলদ আছে। তাই দরিদ্রতা বাড়ছে। এ জিনিসটাকে আমাদের উন্নতি না করলে কঠিন হবে। দুর্নীতি আছে, আমাদের আইনের কিছু গলদ আছে, আমাদের প্রক্রিয়ায়ও কিছু গলদ আছে।’ গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এসডিএফ) আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী প্রমুখ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. আবদুর রাজ্জাক।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দরিদ্র একটা কঠিন বিষয়। আমাদের দেশে বহু দরিদ্র জনগণকে দেখলেই বোঝা যাবে দরিদ্র। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী বা আমি বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি, এমনকি বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুরের বহু মানুষ অর্ধেক সময় পানিতেই থাকে। এ রকম খারাপ একটা জায়গা আছে যেখানে একেবারে স্যাঁতসেঁতে জায়গা। অতএব দরিদ্র দূর করা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে একটা ভালো রেকর্ড হলো দরিদ্রতা কমে। আমি বলব এটা সাফল্য। বিশেষত ২০১০ থেকে শুরু করে ক্রমাগত কমেছে। কিন্তু এখন ২০২২ থেকে হঠাৎ করে আবার একটু বাড়তে শুরু করেছে। নিশ্চিত প্রক্রিয়ায় একটু গলদ আছে। গলদ না থাকলে তো আরও বেশি কমত। মাঝখানে উল্টো দিকে ঘুরত না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসডিএফের প্রজেক্টটা মোটামুটি ভালো। নারীরাই কিন্তু সবচেয়ে বেশি উদ্যোগী এবং কর্মঠ। আর টাকা-পয়সা হিসাব রাখতে সবচেয়ে বেশি পারদর্শী। পুরুষদের কাছে টাকা গেলে তো অনেক কিছুই করে। ভারতে স্টাডি হয়েছে দক্ষিণের দিকে পুরুষরা টাকা পেলে নাকি মদ্যপান করে, সব টাকা তারা খেয়ে ফেলে। এ জন্য নারীর কাছে টাকা দেওয়াটাই বেটার। কারণ নারীরা ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ারের দিকে নজর দেয় সব সময়। আর পুরুষরা করে কী নিজেরটা দেখে।’
সালেহউদ্দিন বলেন, ‘একটা বিষয় উঠে আসছে শহরে দারিদ্র্য বাড়ছে। তবে ফোকাসটা শহরের ওপর দেওয়ার চেয়ে আমি মনে করি সার্বিকভাবে বিকেন্দ্রীকরণ উন্নয়ন করা। শহরের দরিদ্রের ওপর বেশ নজর দিলে পুল ফ্যাক্টর আসবে। শহরে নজর দেওয়ার দরকার আছে, তবে গ্রামে বেশি নজর দিতে হবে।’
তিনি বলেন, অনেক সময় যারা দারিদ্র্যসীমার কাছাকাছি থাকে, একটু ওপরে উঠে হঠাৎ করে ঝড়ঝাপটা বা কিছু হয় আবার নিচে নেমে যায়। এমন ওঠানামার থেকে বেটার হলো উঠে যেন স্থিতিশীল হয়। সেটাই সরকারের চ্যালেঞ্জ, আমাদের সবার চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জটা যেন আমরা মোকাবিলা করতে পারি। এই প্রত্যয়টা নিয়ে যেন আমরা এগিয়ে যেতে পারি।’