চলতি বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি প্রত্যাশার তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। একক মাসে রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ৩১৪ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ শতাংশ কম। ২০২৪ সালের নভেম্বরে পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৩৩০ কোটি ডলারের। বিশ্বের সবচেয়ে বড় পোশাক রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ধারা ধরে রাখলেও সামগ্রিক রপ্তানি আয়ে এই ধীরগতি নীতিনির্ধারক ও খাতসংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
গতকাল প্রকাশিত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি-আগস্টে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬৪ কোটি ডলারে, যার প্রবৃদ্ধি ১৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। পিস হিসেবে আমদানিতে ১৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ বৃদ্ধি এবং ইউনিট মূল্যেও ১ দশমিক ০৮ শতাংশ বৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে। তবে জুলাইয়ে রপ্তানি ছিল ৭২ কোটি ৯৮ লাখ ডলার, যা আগস্টে কমে ৬৬ কোটি ডলারে নেমে এসেছে, ইঙ্গিত মিলছে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ধীরগতির।
মার্কিন বাজারে বিভিন্ন দেশের পারফরম্যান্সে বড় ধরনের ভিন্নতা দেখা গেছে। যেখানে ভিয়েতনাম, ভারত, পাকিস্তান, কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়া দ্বি-অঙ্কের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে, সেখানে চীন থেকে আমদানি ২৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমেছে। ইউনিট হিসেবে বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তান শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে ইউনিট দামের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মাত্র ১ দশমিক ০৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে যা সামান্য। অন্যদিকে কিছু দেশ দামে বড় ধরনের পতনের মাধ্যমে মূল্য প্রতিযোগিতায় সুবিধা নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরের ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়া নতুন পাল্টা শুল্কের (ট্যারিফ) প্রভাব এখনো সরকারি তথ্যভান্ডার ওটেক্সার প্রকাশিত তথ্যে প্রতিফলিত হয়নি। ফলে আগামী মাসগুলোতে শুল্কের সরাসরি প্রভাব রপ্তানির ওপর কী ধরনের চাপ সৃষ্টি করে তা পরিষ্কার হবে। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬১৩ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র ০ দশমিক ০৯ শতাংশ বৃদ্ধি। এতে দেখা যাচ্ছে খাতটি কার্যত স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না। ইপিবির প্রতিবেদনের তথ্য মতে নভেম্বরে নিটওয়্যার রপ্তানি ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ কমে ১৬২ কোটি ডলার, ওভেন ২ দশমিক ৯০ শতাংশ কমে ১৫২ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
নভেম্বরে উভয় সাবসেক্টরেই রপ্তানির পতন দেখা গেছে, যা সার্বিক চাপকে আরও গভীর করেছে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের আমদানির প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হলেও সাম্প্রতিক রপ্তানি ধীরগতি আগামী মাসগুলোতে চাপ বাড়াতে পারে। বৈশ্বিক চাহিদা হ্রাস, ব্যয় বৃদ্ধির চাপ, প্রতিযোগী দেশের দামের আগ্রাসি কৌশল এবং নতুন ট্যারিফ সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
তবে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বাজার বহুমুখীকরণ, প্রযুক্তি-নির্ভর উৎপাদন, পরিবেশবান্ধব লিড সার্টিফিাইড কারখানা, মূল্য প্রতিযোগিতার কৌশল দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে।
২০২৫ সালের জানুয়ারি-আগস্ট সময়ে যুক্তরাষ্ট্র অ্যাপারেল আমদানিতে সামান্য ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। দেশটি এ সময়ে ৫ হাজার ৩০১ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি। ইউনিট ও দামের ক্ষেত্রেও কিছুটা বৃদ্ধি লক্ষণীয়।