১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর। তখন রমজান মাস। ফজরের নামাজের আগে ১৪ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বাবুরপুকুর নামক স্থানে গুলি করে হত্যা করে পাক বাহিনী। বগুড়া জেলার কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায় ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে অনেক মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধের মাঠ থেকে বাড়ি ফিরেন। সেদিন ছিল ১১ নভেম্বর, ২১ রমজান। অনেকে সাহরি খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, কেউ কেউ সাহরি করেছেন। সেই সময় শান্তি কমিটির সহযোগিতায় পাক হানাদার বাহিনী হানা দেয় বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়ার শাহ পাড়া, মণ্ডলপাড়া, তেঁতুলতলা, হাজীপাড়া ও পশারীপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায়। সেসব এলাকার বিভিন্ন বাড়ি থেকে হানাদার বাহিনী টেনেহিঁচড়ে বের করে আনে মান্নান পশারী, তার ভাই হান্নান পশারী, ওয়াজেদুর রহমান টুকু, জালাল মণ্ডল ও তার ভাই মন্টু মণ্ডল, আবদুস সবুর ওরফে ভোলা মণ্ডল, মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল ইসলাম, আলতাফ আলী, বাদশা শেখ, বাচ্চু শেখ, ফজলুল হক খান, টিএন্ডটির তৎকালীন টেলিফোন অপারেটর নূর জাহান, আবুল হোসেন ও তার পিতা গেদু জিলাদার, আশরাফ আলী, জনাব আলী ও তার পুত্র জাহাঙ্গীর খন্দকার, সিবের আলীসহ অজ্ঞাতনামা আরও তিনজনকে। পাক বাহিনী এই ২১ জনকে বাড়ি থেকে বের করে হাত ও চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে নেয়। তাদের নিয়ে যাওয়া হয় বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের পাশে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বাবুরপুকুরে। সঙ্গে ছিল শান্তি কমিটির নেতা। সেই নেতাই আটককৃতদের মধ্য থেকে ১৪ জনকে শনাক্ত করে দেয়। তার শনাক্ত করা টিএন্ডটির মহিলা অপারেটর নূর জাহানসহ ১৪ জনকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়। বাকি সাতজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেদিন যারা পাক বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল, তারা হলেন- শহীদ আবুলের পিতা গেদু জিলাদার ও ছোটভাই আশরাফ আলী, জনাব আলী ও তার পুত্র জাহাঙ্গীর খন্দকার, সাবের আলী এবং অজ্ঞাত দুজন। সেখানে হত্যাযজ্ঞের পর লাশ সারিবদ্ধভাবে ফেলে রাখা হয়। প্রাণে বেঁচে আসা সাতজনের কাছে খবর পেয়ে তাদের আত্মীয়-স্বজনেরা বাবুরপুকুরে ছুটে যায় লাশের সন্ধানে। কিন্তু সেখান থেকে লাশ তারা আনতে পারেনি। সেখানেই কবর দেওয়া হয় ১৪ শহীদকে। ১৯৭৯ সালে শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় বগুড়া প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে প্রথম সেখানকার কবরগুলো পাকা করে দেওয়া হয়। ২০০৯ সালের মাঝামাঝিতে বগুড়া জেলা পরিষদ সেখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে।
বগুড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কালাম আজাদ জানান, ১৯৭১ সালে বগুড়ার বাবুরপুকুরে যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ হয়েছে তা আজও মানুষকে কাঁদায়। শহীদদের স্মৃতি তুলে ধরে সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন ও স্মরণ সভা করা হয়।
বগুড়া জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান জানান, বাবুরপুকুরে স্মৃতিসৌধ রয়েছে। সেখানে যদি কোনো উন্নয়নের প্রয়োজন হয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হবে।