ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আশা করছি তফসিল ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে হবে।’ গতকাল শেরেবাংলানগর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ‘মক ভোটিং’ পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন।
নাসির উদ্দিন বলেন, ‘মক ভোটিং যে রকম হলো, সেভাবে একটা ইলেকশন উপহার দিতে চাই। এমন স্বচ্ছভাবে ভোট করতে চাই।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ধীরে ধীরে উন্নতি হবে এবং পরিস্থিতি নির্বাচনের অনকূল থাকবে।’ তফসিলের পর প্রয়োজন হলে প্রশাসনে রদবদলের উদ্যোগ নেবেন বলে জানান তিনি।
নাসির উদ্দিন বলেন, ‘একটা আদর্শ পরিবেশে সুন্দর নির্বাচন দেওয়ার জন্য আমরা জাতির কাছে যে ওয়াদা দিয়েছি, তা আয়োজন করার জন্য একটা পোলিং সেন্টারে কী ধরনের আবহ থাকা দরকার, যাবতীয় বিষয়াদি আজকে প্র্যাকটিক্যাল ডেমনেস্ট্রেশনের মাধ্যমে দেখতে চেয়েছি।’
গতকাল সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত শেরেবাংলানগর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের চারটি বুথে ভোট গ্রহণ চলে। সিইসি বলেন, ‘মক ভোটিং এক্সারসাইজের মাধ্যমে ভোটাররা এসে লাইনে দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে পোলিং সেন্টারে প্রবেশে করেছেন। তারপর ভোটার স্লিপটা নিয়ে দেখাচ্ছেন, পোলিং অফিসার ডাক দিচ্ছেন, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রিসাইডিং অফিসার ব্যালট পেপার দিচ্ছেন। আবার মার্কিং সিল নিয়ে গোপন কক্ষে ভোট দিয়ে বাক্সে ফেলছে। এ এক্সারসাইজটা অনেকেই জানে না। কিন্তু বিশেষ করে আমাদের যারা নতুন ভোটার, প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন, তারা জীবনে এ ভোট দেখেননি। এটার মাধ্যমে একদিকে একটা অভিজ্ঞতা হচ্ছে।’
নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এখন আমাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে গণভোট এসেছে। এ গণভোট একসঙ্গে করতে হবে। এ ক্ষেত্রে টাইম ম্যানেজমেন্টের একটা বিষয় আছে। আজকের এ অ্যাসেসমেন্টের ভিত্তিতে আমরা ঠিক করব। বিদ্যমান ৪২ হাজার ৫০০-এর বেশি ভোট কেন্দ্র আমাদের জন্য পর্যাপ্ত কি না, নাকি ভোটকক্ষ বাড়াতে হবে, ভোটকক্ষ, লোকবল বাড়ানোসহ কী ধরনের অ্যারেঞ্জমেন্ট করতে হতে পারে, এ প্র্যাকটিক্যাল অ্যাসেসমেন্টটা আজকে আমরা করতে যাচ্ছি।’ ভোটের মহড়ার অভিজ্ঞতা থেকে ইসি করণীয় ঠিক করবে বলে জানান তিনি।
সিইসি বলেন, ‘আমরা অনুমানের ভিত্তিতে এগোতে চাই না। বাস্তবতার ভিত্তিতে এগোতে চাই। প্র্যাকটিক্যালি দেখে এবং আজকে রিয়েল টাইম অ্যাসেসমেন্ট করে তারপর আমরা পরের পরিকল্পনাটা করব।’
গণভোটের বিষয়ে বেশির ভাগ মানুষের স্পষ্ট ধারণা না থাকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, ‘গণভোট নিয়ে প্রচার এখনো ওভাবে শুরু করিনি। সরকার এবং ইলেকশন কমিশন মিলে ব্যাপক প্রচার চালানো হবে গণভোট নিয়ে। প্রচারটা যখন শুরু হবে, তখন দেখা যাবে মানুষ জানল কি জানল না।’
৫ শতাধিক ভোটারের ‘মক ভোটিং’ নিয়ে এ দিন কেন্দ্রে ইসির গলদঘর্ম অবস্থা দেখা গেছে। সকালে প্রথম ঘণ্টায় ভালোভাবে ভোট গ্রহণ হলেও খুব ধীরে ধীরে ভোট হয়েছে। অনেকে ভোটার নম্বর খুঁজতে গিয়ে বিপাকে পড়েন, কেউবা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন অনেকক্ষণ। ঘণ্টাখানেক পরে একজন নির্বাচন কমিশনার পরিদর্শনে এসে ‘মক ভোটিং’ যথাযথভাবে নেওয়ার তাগিদ দেন। এর মধ্যে গণভোট নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মক ভোটাররা।
মক ভোটিংয়ে ৭০ শতাংশ ভোট : মক ভোটিং কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এ মক ভোটিংয়ে ৫০০ ভোটারের মধ্যে ৭০.৪% ভোট পড়েছে। অর্থাৎ ৩৫২ জন ভোট দিয়েছেন। চার ভোটকক্ষে মক ভোটিং নেওয়া হয়। প্রতিটি ভোট দিতে কত সময় লেগেছে তা নির্ধারণ করা যাবে না।’
ভোটের মহড়াতেই অব্যবস্থাপনা : সংসদ নির্বাচন ও গণভোট নিয়ে গতকাল ঢাকায় যে মহড়া হয়েছে, তাতে অব্যবস্থাপনা দেখে ইসি আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ নতুন করে ভোট গ্রহণ শুরু করেন। ভোটের মহড়া দেখতে কেন্দ্রে উৎসুক মানুষ ও ভোটারের ভিড় দেখা গেছে। সাংবাদিকদের তৎপরতাও চোখে পড়ার মতো ছিল।