অতিরিক্ত সংস্কার নিয়ে সতর্ক করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ধারণক্ষমতার বাইরে সংস্কার করতে গিয়ে রাষ্ট্রকাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ছে কি না, তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। কারণ সংস্কার একটি ধাপে ধাপে বা ক্রমান্বয়ে হওয়ার প্রক্রিয়া। গতকাল সোমবার সকালে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনের জগন্নাথ-সোহেল স্মৃতি মিলনায়তনে ই-পারিবারিক আদালতের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে উপদেষ্টারা সশরীরে ঢাকার ই-পারিবারিক আদালতগুলো পরিদর্শন করেন।
ড. আসিফ নজরুল সিঙ্গাপুরের উদাহরণ টেনে বলেন, সংস্কার নিয়ে সবার আগে আমরা যার নাম নিই, তিনি হচ্ছেন সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান। ওনার সংস্কার করতে ১০ বছর লেগেছে। এটা রাতারাতি করার ব্যাপার না। সুযোগ এলো আর সবকিছু আইনের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলাম, সঙ্গে সঙ্গে সংস্কার হয়ে গেল, অন্ধকার ঘর আলো হয়ে গেল, ব্যাপারটা এমন ম্যাজিক নয়।
সংস্কার মানেই সংবিধান পরিবর্তন নয়, মন্তব্য করে আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক খাতে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হয়েছে ভ্যাট চালু করে। ভ্যাট কি সংবিধান পরিবর্তন করে হয়েছে? এটা তো আইনের মাধ্যমে হয়েছে। তিনি এসিড সন্ত্রাস দমনের উদাহরণ দিয়ে বলেন, এক সময় এটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল, যা এখন নেই বললেই চলে; এই পরিবর্তনও আইনের মাধ্যমেই হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা জানান, সরকার বিদায় নেওয়ার আগেই ৬৪টি জেলায় লিগ্যাল এইড বা আইনি সহায়তা কার্যক্রম বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হবে। বর্তমানে ২০টি জেলায় এটি শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, যাওয়ার আগে, ৬৪টি জেলায় লিগ্যাল এইড করে দিয়ে যাব। যখন আমরা অধিদপ্তরে রূপান্তরিত করব, তখন এটা পুরোপুরি ফাংশনাল হবে। বাংলাদেশে যত মামলা হয় তার তিন ভাগের একভাগ কমে যাবে। পাঁচ বছরের মধ্যে মামলার জট ৫০ শতাংশ কমে যাবে।
বিচার বিভাগকে পেপারলেস করার উদ্যোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, মামলা দায়ের, নথি ব্যবস্থাপনা, শুনানি ও রায় সবকিছুই অনলাইনে পাওয়া যাবে। এতে ভোগান্তি, সময়, খরচ ও দুর্নীতি কমবে। ডিজিটালাইজেশনের কারণে আইনজীবীদের কাজ কমে যাবে এমন ভীতি অমূলক উল্লেখ করে বলেন, যখন দেখবেন, ডিজিটালাইজেশন হয়ে গেছে। অর্থাৎ মামলার প্রতিকার পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়লে, আরও অনেকে মামলা করবে। কোনোভাবেই আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।
অনুষ্ঠানে বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আদালত প্রাঙ্গণে আসাটা আমাদের জন্য এক্সসাইটিং কিন্তু বিচারপ্রার্থীদের জন্য এটা একটি আজাবের মতো। এখানকার যাবতীয় ব্যবস্থাপনা কখনোই মক্কেল ফ্রেন্ডলি ছিল না। যদি সার্ভার ডাউনের মতো কুচক্রের মধ্যে না পড়ি তাহলে সত্যিকার অর্থেই ই-পারিবারিক আদালত মানুষের উপকারে আসবে। তিনি আরও বলেন, সমাজে পরিবর্তন চাইলেও একটি ন্যস্ত স্বার্থগোষ্ঠী তা চায় না। পরিবর্তন কেবল সিস্টেমে নয়, মনস্তত্ত্বেও আনতে হবে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, ঢাকা এবং চট্টগ্রামে ই-পারিবারিক আদালতের কার্যক্রম চালুর ফলে সময়, শ্রম ও মামলার জট নিরসন ঘটবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. সাব্বির ফয়েজ, ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. খোরশেদ মিয়া আলম, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী এবং ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের ডিসি মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন হাছান প্রমুখ।