বেনাপোল স্থলবন্দরে প্রায় দুই মাস ধরে আটকে আছে ১০০ কোটি টাকা মূল্যের দেড় শতাধিক রপ্তানিমুখী সুপারীর ট্রাক। ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে পণ্যের মান নির্ণয় ও কৃত্রিম জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় এ অবস্থা তৈরী হয়েছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
এদিকে, আটকে থাকা সুপারীর ট্রাককে প্রতিদিন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে দিতে হচ্ছে ২ হাজার টাকা করে ডিটেনশন ফি। ফলে শুধুমাত্র ট্রাকের ডেমারেজ বাবদ গত এক মাসে লোকসান হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। সংকট কাটাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে যেসব পণ্য রপ্তানি হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সুপারী। সুপারী উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। গুণগত মান ভাল হওয়ায় পাশ্ববর্তী দেশে বাংলাদেশের সুপারীর বেশ চাহিদা রয়েছে। বছরে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার সুপারী রপ্তানি হয় ভারতে। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর রপ্তানি বাণিজ্যে আসে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা। বর্তমানে বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানির পরিমান কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। খাদ্যপণ্য হিসেবে সুপারী রপ্তানির আগে ভারতে মান পরীক্ষা করা হয়।
মান পরীক্ষার ফলাফল পেট্রাপোল পৌঁছাতে দেরি করে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে— এমন অভিযোগ বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের। তাদের দাবি, বাণিজ্য ঘাটতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে দেশটি।
পরিসংখ্যান বলছে, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতের সুপারি আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরে (২০২৩-২০২৪) এই পরিমাণ ছিল মাত্র ১৩ দশমিক ২৯ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে প্রায় চার গুণ। এর ফলে, ভারতের মোট সুপারি আমদানিতে বাংলাদেশের অংশীদারত্ব ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৪-২৫ সালে দাঁড়িয়েছে ৩৭ শতাংশে।
বেনাপোল বন্দরে সুপারী বাহী ট্রাক চালক মমিন জানান, ১ মাস ২৭ দিন ধরে তিনি গাড়ি নিয়ে অপেক্ষায় আছেন। তাঁর মত আরও দেড় শতাধিক ট্রাক ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। ভারতের ব্যবসায়ীরা সুপারীর বাজার নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট করে এসব ট্রাক দেরিতে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি কামাল উদ্দিন শিমুল বলেন, সুপারি রপ্তানি নিয়ে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে তা অমূলক। সংকট নিরসনের জন্য দুই দেশের সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। ৫ আগষ্টের পর ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে পাট ও পাটজাত পণ্য, গার্মেন্টস, তৈরী পোশাক, কাঠের তৈরী আসবাবপত্র, ফলের জুসসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি পণ্য সড়ক পথে রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। সুপারি রপ্তানিতে নতুন করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে মনে করছেন বেনাপোলের ব্যবসায়ীরা।
উল্লেখ্য, সুপারী উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। সুপারি মূলত পানের সঙ্গে খাওয়ার প্রচলন থাকলেও ঔষধি গুণাগুণ, পশুখাদ্য, প্রাকৃতিক রঙ তৈরি, হস্তশিল্পসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার হয়।
বিডি-প্রতিদিন/জামশেদ