পার্বত্য চট্টগ্রামের পানিসংকট ও জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় গবেষণায় বিশেষ অবদান রাখায় গ্রীণ ক্লাইমেট রিসার্চ স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন বসুন্ধরা শুভসংঘের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল সমন্বয়ক ও বান্দরবান জেলা শাখার সভাপতি উয়ই সিং মার্মা।
জার্মান সরকারের অর্থায়নে ব্রেড ফর দ্যা ওয়ার্ল্ড এর সহযোগিতা ও সিসিডিবি এর আয়োজনে এই মর্যাদাপূর্ণ স্কলারশিপ প্রদান করা হয়।
পাহাড়ি মানুষের ঐতিহ্যগত জ্ঞান ও প্রকৃতিনির্ভর পদ্ধতি ব্যবহার করে দীর্ঘমেয়াদি পানিসমাধানের পথ খোঁজাই তার গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল। বর্ষায় প্রচুর বৃষ্টি হলেও শুষ্ক মৌসুমে পার্বত্য চট্টগ্রামে তীব্র পানিসংকট দেখা দেয়। ঝরনা ঝিরি শুকিয়ে যাওয়া, জুমচাষ ও বননিধনের ফলে পানির উৎস কমে আসা, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, খাল ঝরনার প্রাণহানি সব মিলিয়ে পানির প্রাপ্যতা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ে।
বিশুদ্ধ পানি না পাওয়ায় ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েডসহ পানিবাহিত রোগে প্রতিবছর বহু মানুষের মৃত্যু হয়। নারী ও শিশুরা প্রতিদিন দীর্ঘ পথ হেঁটে পানি সংগ্রহ করতে বাধ্য হন।
২০২২ সাল থেকে মাঠপর্যায়ে গবেষণা করছেন উয়ই সিং মার্মা। তার ভাষায় ‘উপলব্ধি যদি মানুষের, আর সমাধান যদি প্রকৃতির—তাহলেই টেকসই ভবিষ্যৎ সম্ভব।’
পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এই অর্জন আমি উৎসর্গ করছি আমার মাকে। ছয় বছর বয়সে তাকে হারালেও মামা–মামী আমাকে ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছেন। তাদের প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ।’
অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট এর মহাপরিচালক মো. নূরুজ্জামান এনডিসি। বিশেষ অতিথি ছিলেন ড. মতিন, ডিন, পরিবেশ বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং হামিদুল হক, ডিন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়।
অনুষ্ঠান সভাপতিত্ব করেন সিসিডিবি এর পরিচালক জুলিয়েট কেয়া মালাকার। এছাড়া দেশের ১৫টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন।
বসুন্ধরা শুভসংঘ বান্দরবান জেলা শাখার সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে তিনি পরিবেশ রক্ষায় তরুণদের সম্পৃক্ত করে আসছেন। তার উল্লেখযোগ্য উদ্যোগগুলো হলো, গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইক আয়োজন, মাসিক শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ,জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সেমিনার,বৃক্ষরোপণ ও প্লাস্টিক দূষণবিরোধী প্রচারণা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক পরিবেশ সচেতনতা কর্মসূচি।
বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ‘জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন এবং প্রশমন - ভারত মহাসাগর অঞ্চল কোর্স ‘এর ফেলো হিসেবেও যুক্ত আছেন।
উয়ই সিং মার্মার এই অর্জন শুধু একটি ব্যক্তিগত সাফল্য নয়—এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের সংগ্রাম, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই পানিসমাধান গড়ার প্রত্যয়ের প্রতীক। তার কাজ তরুণ গবেষকদের অনুপ্রেরণার এক উজ্জ্বল মাইলফলক হয়ে থাকবে।
বিডি প্রতিদিন/কামাল