জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার কানাইপুকুর এলাকায় গড়ে উঠেছে এক অনন্য ‘পাখি কলোনি’। মরহুম আলহাজ্ব আবদুস সোবহান মণ্ডলের জমিতে এখন হাজারো পাখির বসবাস। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় তরুণরা মিলে এ স্থানকে পরিণত করেছেন পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থলে।
কানাইপুকুর পাখি কলোনির গাছভর্তি পাখির আবাস রক্ষায় সচেতনতা বাড়াতে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ ক্ষেতলাল শাখা। পর্যটক ও এলাকাবাসীকে করা হয়েছে পাখি রক্ষায় কাউন্সিলিং। পাখি কলোনিকে চিহ্নিত করতে একটা বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। এতে রয়েছে পরিবেশ রক্ষায় পাখির গুরুত্ব ও পাখি শিকার না করার মতো সচেতনতার বার্তা। পাখির নিরাপদ আবাসস্থল রক্ষায় ইউএনওকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষেতলাল উপজেলা চত্বরে পাখি কলোনি গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পর্যটন উন্নয়নে সরকারিভাবে পাখি কলোনির কাঁচা ও ভাঙা রাস্তা পাকাকরণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ, রাস্তাটি এলজিইডি আইডিভুক্ত করার মতো দাবিগুলো ইতোমধ্যে পূরণ হওয়ার পথে।
কয়েক বছর আগে, মরহুম আবদুস সোবহান মণ্ডলের পুকুর পাড়ের বটগাছে অতিথি হয়ে বাসা বাঁধে শামুকখোল পাখি। পরম যত্নে পাখিগুলো এখনো আছে বছর জুড়ে। আজ তিনি আর নেই। পাখিগুলো আছে তার সন্তানদের মতোই।
এই উদ্যোগের নেতৃত্বে রয়েছেন কানাইপুকুর পাখি কলোনির সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। তাঁদের সঙ্গে কাজ করছেন তানজিম আহমেদ তামিম, তৌফিক তাহমিদ রওনক, মোছা. আক্তার বানুসহ গ্রামের বাসিন্দারা।
প্রতিদিন সকাল-বিকেলে কলোনি ভরে ওঠে নানা প্রজাতির দেশি পাখির কলকাকলিতে। শালিক, ঘুঘু, পানকৌড়ি, বক, শামুকখোল, দোয়েলসহ অসংখ্য পাখি এখানে আশ্রয় নেয়।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাবার রেখে যাওয়া এই জায়গাটিতে আমরা পাখিদের আবাস গড়ে তুলেছি। এখন এটি গ্রামের মানুষের গর্ব। ছোট ছোট শিশুদেরও পাখির প্রতি ভালোবাসা তৈরি হচ্ছে।
পরিবেশবান্ধব এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বসুন্ধরা শুভসংঘ ক্ষেতলাল উপজেলা শাখার সভাপতি পরিবেশ কর্মী এম রাসেল আহমেদ বলেন, ক্ষেতলালের কানাইপুকুর পাখি কলোনি প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত। বসুন্ধরা শুভসংঘ সবসময় এমন উদ্যোগের পাশে থাকবে। পাখি বাঁচলে প্রকৃতি বাঁচবে, মানুষও বাঁচবে। পাখিদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করা মানেই নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শীতকালে এখানে অতিথি পাখিরা আসে ঝাঁকে ঝাঁকে। কেউ কেউ কলোনিটিকে ছোট্ট ইকো-পার্কে রূপ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
পরিবেশবিদদের মতে, গ্রামীণ সমাজে এ ধরনের উদ্যোগ বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক আম্মার হোসেন, সাধারণ সদস্য জিসান, রাব্বি হাসান, সাকিব, শাহরিয়ার, আ. রহমান প্রমুখ।
বিডি-প্রতিদিন/তানিয়া
