যানবাহন চালকদের খামখেয়ালি ও নিজেদের ইচ্ছামতো চালানোর কারণে বরিশাল নগরীতে যানজটসহ ভোগান্তি নিত্যচিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনোভাবেই যানবাহন চালকদের নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে পারছে না ট্রাফিক পুলিশ।
এ ছাড়াও রয়েছে ফুটপাতসহ সড়ক দখল করে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের স্থাপনা। যে যার ইচ্ছামতো সড়ক ও ফুটপাত দখল করে রেখেছেন; যেন দেখার কেউ নেই। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে জোটবদ্ধ হয়ে শুরু করে সড়ক অবরোধ। শুরু হয় বিক্ষোভ-আন্দোলনও। যার কারণে নগরীতে বেপরোয়াভাবে বাড়ছে অবৈধ যানবাহন ও ভ্রাম্যমাণ বিভিন্ন পণ্য বিক্রেতার সংখ্যা। ভোগান্তিতে থাকেন সাধারণ মানুষ।
বরিশাল নগরীর ব্যস্ততম সদর রোড। সড়কের দুই পাশের ফুটপাত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড দিয়ে আটকে রাখা হয়। ফুটপাতের পাশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ব্যাংক বিমায় কর্মরতরা যানবাহন পার্কিং করে দখল করেন। ফাঁকা স্থান দখল করেন বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা। যতটুকু সড়ক থাকে, সেখানে ব্যাটারিচালিত ও প্যাডেল চালিত রিকশা, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। যেখানে খুশি সেখান থেকে এসব যানবাহন থেকে যাত্রী ওঠানো নামানো হয়। যার কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। ব্যস্ততম গির্জা মহল্লা সড়কের দুই পাশের সড়ক মোটরসাইকেল রেখে এমনভাবে দখল করা হয়; সেখানে একটি যানবাহন চলাচল দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। নগরের বাসিন্দাদের সবচেয়ে বিরক্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় এই সড়কে। ইচ্ছামতো সড়ক দখল করে রাখেন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। বিবির পুকুরের চারপাশ দখল করে রেখেছেন ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা। পুকুরের চারপাশে ওয়াকওয়ে দিয়ে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের কারণে হাঁটাও যায় না। সড়কে দোকান বসিয়ে ফুটপাতে দেওয়া হয় খাবার। নগরীর কালেক্টরেট পুকুরের পাড় পুরোনো কাপড় বিক্রেতাদের দখলে। ফজলুল হক অ্যাভিনিউ সড়কটি নানা ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা ২৪ ঘণ্টাই দখলে রেখেছেন। নগরীর চৌমাথা লেকপাড়ের দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশে দোকান বসানো হয়েছে। এ ছাড়া পূর্ব পাড়ে যেসব খাবারের দোকান ছিল, সেগুলো সিঅ্যান্ডবি সড়কের পূর্ব পাশের ফুটপাত দখল করে আবার ব্যবসা চালাচ্ছে। এমনকি এসব দোকানে আসা ক্রেতাদের বসার জন্য সড়কের ওপরে টেবিলে চেয়ারও পাতা হয়েছে। চটপটি, ফুচকা থেকে শুরু করে বার্গার, ফ্রাই সবই মিলছে ফুটপাতে। নগরীর বাংলাবাজার সড়কটি ভ্রাম্যমাণ দোকানের কারণে সব সময় যানজট লেগে থাকে। মূল সড়কের ওপর প্রকাশ্যে সবজিসহ মাছ বিক্রি হলেও কারও যেন দায় নেই। অনিয়ম এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে নগরীর সড়কগুলোতে।
বরিশাল নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্ল্যানার মো. বায়জীদ বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশে বাণিজ্যিক এলাকায় যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হয় না। মানুষ হেঁটে হেঁটে কেনাকাটা করে। বরিশাল নগরীর গির্জা মহল্লা, চকবাজার ও সদর রোডের কিছু অংশে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এতে ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমবে। বরিশাল ট্রাফিক পুলিশ বলছে, নগরীতে ছয় ধরনের যানবাহন চলাচল করে। সড়কে চলাচল করার ক্ষমতার চেয়ে ১০ গুণ বেশি যানবাহন রয়েছে। তাই কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে বিপদে পড়তে হয়। শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে জোট বেঁধে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। যার কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। তাই তারাও ঢিমেতালে দায়িত্ব পালন করেন বলে জানিয়েছেন ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা।