রাজধানীর কুড়িল ফ্লাইওভারে বিভিন্ন জায়গায় পিচ উঠে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। এসব গর্তে মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে। কুড়িল ফ্লাইওভারসহ মালিবাগ-মৌচাক, বনানী, মহাখালী ফ্লাইওভারজুড়ে রাতে জ্বলে না সড়কবাতি। একই সঙ্গে অকার্যকর হয়ে পড়েছে ড্রেনেজ ব্যবস্থা। ফ্লাইওভার বানানোর অনেক আগ্রহ থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণে খুঁজে পাওয়া যায় না কোনো সংস্থাকেই। অরক্ষিত এসব ফ্লাইওভারে ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে ঝুঁকি।
কুড়িল ফ্লাইওভার সরেজমিন দেখা যায়, খিলক্ষেত থেকে ফ্লাইওভারে ওঠার সময় এবং মধ্যখানে বেশ কয়েকটি বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এই ফ্লাইওভার ব্যবহার করা গাড়িগুলো গর্তে পড়ছে। বিশেষ করে মোটরসাইকেল দ্রুত এসেই গতি কমাতে না পেরে গর্তে পড়ে। এতে কোনো কোনো মোটরসাইকেল চালক নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে পাশে পড়ে যায়। এ ঘটনায় নিহতের খবর না পাওয়া গেলেও আহত অহরহ। এ ছাড়া ফ্লাইওভারের সব র্যাম্পের মাথা ও ঢালু অংশে ময়লা এবং বালুর স্তর জমে আছে। একই সঙ্গে ফ্লাইওভারের মধ্যখানে কয়েকটি বাতি থাকলেও র্যাম্পগুলোতে বাতি নেই।
নিয়মিত এ ফ্লাইওভার দিয়ে যাতায়াত করে এমন কয়েকজন বলেন, কুড়িল থেকে খিলক্ষেত যাওয়ার জন্য নিচ দিয়ে কোনো বিকল্প রাস্তা নেই। এ কারণে রাতে সব ধরনের যান এ ফ্লাইওভার ব্যবহার করে। বিশেষ করে বিভিন্ন মালামাল বহনকারী রিকশাভ্যানও ওঠে ফ্লাইওভারে। মানুষচালিত যানগুলো ফ্লাইওভারে উঠতে গিয়ে অনেক ধীরে চলে। তখন পেছনের দিকের গাড়িগুলোর যানজট তৈরি হয়। রিকশাভ্যানও ফ্লাইওভারে ওঠে অথচ তা দেখার কেউ নেই। উত্তরখান এলাকার বাসিন্দা ইয়াসির বলেন, রাতে মোটরসাইকেল নিয়ে কুড়িল ফ্লাইওভারে চলা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। একদিকে বড় বড় গর্ত অন্যদিকে ফ্লাইওভারের জয়েন্টগুলোতে বড় গাড়িও লাফিয়ে ওঠে। একটু অসাবধান হলেই এখানে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আছে। তিনি বলেন, যারা অনিয়মিত চলাচল করেন তাদের দুর্ঘটনায় পড়ার আশঙ্কা বেশি।
এ ছাড়া মহাখালী ফ্লাইওভারে উঠতেই দেখা যায় বিশাল গর্ত। যেখানে গাড়ি পড়লে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাই বেশি। এ ছাড়া ফ্লাইওভারজুড়ে রাতে জ্বলে না সড়কবাতি। এতে দুর্ঘটনার পাশাপাশি চুরি, ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একই অবস্থা বনানী ওভারপাসেও। ওভারপাসটির তিনটি সড়কবাতি ছাড়া সবই বন্ধ। এতে যান চলাচলের ঝুঁকি রয়েছে। একই সঙ্গে ময়লা-আবর্জনা তো রয়েছেই।
এদিকে ঢাকার মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার চালু হয় ২০১৭ সালে। নির্মাণের মাত্র আট বছরের মাথায় জায়গায় জায়গায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে ফ্লাইওভারটির ড্রেনেজ ব্যবস্থা। পানি নিষ্কাশনের পাইপ কোথাও ময়লা-আবর্জনা জমে বন্ধ হয়েছে, কোথাও ফেটেছে, আবার কোথাও চুরি গেছে। তাই সামান্য বৃষ্টিতে ফ্লাইওভারের বিভিন্ন অংশে পানি জমছে। জমে থাকা পানির সহায়তায় বেড়ে উঠছে বট-অশ্বত্থসহ বিভিন্ন গাছ।
খিলগাঁও এবং গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের বিভিন্ন জয়েন্ট সরে গিয়ে অস্বাভাবিক ফাঁকা হয়ে আছে। অনেক ফ্লাইওভারে রেলিং, সড়ক বিভাজক ভেঙে পড়েছে। কোথাও পিচ কিংবা কংক্রিটও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে থাকছে দিনের পর দিন। নাটবোলটুসহ বিভিন্ন কাঠামো চুরি হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি লাইট নষ্ট থাকার কারণে রাতে ফ্লাইওভারগুলোতে ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক ঘটনাও ঘটছে।
ঢাকা মহানগর এলাকায় ফ্লাইওভার বা সমজাতীয় অবকাঠামো রয়েছে আটটি। এগুলো হলো- মহাখালী ওভারপাস, খিলগাঁও ফ্লাইওভার, বিজয় সরণি-তেজগাঁও লিংক রোড ওভারপাস, বনানী ওভারপাস, কালশী ফ্লাইওভার, কুড়িল ফ্লাইওভার, গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার ও মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার।
বড় অভিযোগ না উঠলে, দুর্ঘটনা না ঘটলে কিংবা গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত না হলে কোথাও নিয়মমাফিক তদারকি ও ফ্লাইওভার রক্ষণাবেক্ষণ করতে দেখা যায় না বলে মনে করছেন অধ্যাপক ড. সামছুল হক। তিনি বলেন, ‘ফ্লাইওভার নির্মাণের পর নির্দিষ্ট সময় পরপর রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। যেমন- বর্ষার আগে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক করে দিতে হয়। এ ছাড়া ফ্লাইওভারের জয়েন্টগুলোকে ঠিক রাখা, বিয়ারিং প্যাডগুলোর সক্ষমতা যাচাই করা, লাইট ঠিকমতো জ্বলছে কি না এমন নানা বিষয় পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এ সংস্কৃতি একেবারেই নেই। আমাদের এখানে সংস্কৃতি হলো ফ্লাইওভারের কোনো অসংগতি সম্পর্কে আগে অভিযোগ উঠতে হবে। গণমাধ্যমে খবর হতে হবে। তারপর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।’