রাজশাহী বর্তমানে পরিণত হয়েছে যানজটের নগরীতে। শহরের প্রায় সব ব্যস্ত সড়কেই এখন নিয়মিত তীব্র যানজট দেখা যায়। অটোরিকশা-বাস-সিএনজি স্ট্যান্ডের বিশৃঙ্খলা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, আর একাধিক নির্মাণ প্রকল্পের কারণে নগরবাসীর জীবনযাত্রা হয়ে পড়েছে দুর্বিষহ।
সরেজমিন রাজশাহীর ব্যস্ততম স্থান গৌরহাঙ্গা রেলগেটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পাশাপাশি গড়ে উঠেছে অটোরিকশা, বাস ও সিএনজি স্ট্যান্ড। একই জায়গায় চলছে ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ। ফলে সকাল-বিকাল সব সময় এখানকার সড়কে থাকে তীব্র যানজট। দুর্ভোগে পড়েন শিক্ষার্থী, অফিসগামী ও স্থানীয়রা। অভিযোগ, শুধু রেলগেট নয়, সাহেববাজার, লক্ষ্মীপুরসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে একই অবস্থা।
অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন, এলোমেলো স্টপেজ, ট্রাফিক পুলিশের স্বল্পতা এবং সড়কে চাঁদা আদায়ের মতো কারণগুলো যানজটকে আরও প্রকট করছে বলে অভিযোগ করছেন নগরবাসী। রাজশাহী মহানগরী পুলিশের মুখপাত্র গাজিউর রহমান জানান, ‘ট্রাফিক ব্যবস্থার পাশাপাশি শহরে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে প্রবেশ করা বিপুলসংখ্যক অবৈধ অটোরিকশাই যানজটের প্রধান কারণ। এগুলোর বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান প্রয়োজন।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় অনুমোদিত অটোরিকশা ৮ হাজার ৯৭০টি, চার্জার রিকশা ৫ হাজার ১৯টি। তবে প্রতিদিনই বিভিন্ন উপজেলা থেকে শত শত অনুমোদনহীন অটোরিকশা শহরে প্রবেশ করছে; যা সড়কে চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে কয়েক গুণ। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন খোকন বলেন, ‘আগে শহরের প্রবেশদ্বারে অবৈধ অটোরিকশা ঠেকাতে পুলিশের চেকপোস্ট সক্রিয় ছিল। এখন সেগুলো কার্যত নিষ্ক্রিয়, ফলে শহরে বেপরোয়াভাবে ঢুকছে অনুমোদনহীন যানবাহন। এতে বাড়ছে যানজট ও দুর্ঘটনা।’
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি নির্মাণকাজ, গণ পরিবহনের অনিয়ম, ফুটপাত দখল, এলোমেলো স্ট্যান্ড- সব মিলিয়ে এক সময়ের শান্ত-শৃঙ্খল রাজশাহী এখন হয়ে উঠছে একটি যানজটের নগরী। দৈনন্দিন যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষার্থী, রোগী, কর্মজীবীসহ সাধারণ মানুষ।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরীতে অনুমোদন ছাড়া অটোরিকশা প্রবেশ বন্ধ, স্ট্যান্ডগুলোর পুনর্বিন্যাস, ফ্লাইওভার ও নির্মাণকাজের সময় বিকল্প ট্রাফিক পরিকল্পনা, স্টপেজ নির্ধারণ, নিয়মিত ট্রাফিক মনিটরিং- এসব পদক্ষেপ ছাড়া যানজট কমানো সম্ভব নয়।