চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানাধীন বটতলী মৌজার রেয়াজুদ্দিন বাজারের ৩২ নম্বর ‘বাণিজ্য ভবন’ নামের একটি ছয় তলা অনুমোদনহীন ভবন ভেঙে ফেলার জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর চিঠি দেয়। কিন্তু দুই বছর পার হলেও ভবনটি ভাঙা হয়নি।
কেবল এটি নয়, নগরের এমন অসংখ্য অনুমোদনহীন বা নকশাবহির্ভূত ভবনের মালিককে ভেঙে ফেলার জন্য চিঠি দেওয়া হলেও তা মানা হচ্ছে না। চউক এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না। জানা যায়, বর্তমানে নগরে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১১১টি ভবন আছে। কিন্তু চউকের অনুমোদনহীন ভবন কয়টি আছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে চউক ভুক্তভোগীদের অভিযোগ এবং নিজস্ব পরিদর্শনের ভিত্তিতে অনুমোদনহীন ভবন ভাঙার জন্য সংশ্লিষ্ট মালিককে চিঠি দেয়।
সিডিএর অথরাইজড অফিসার-২ প্রকৌশলী তানজীব হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম নগরে অনেক পুরোনো ভবন আছে, যা নির্মাণের সময় অনুমোদন নেওয়া হয়নি। অননুমোদিত ভবনগুলোর বেশির ভাগই অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত। মূলত মিস্ত্রি দ্বারা এসব ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। তাই এসব ভবনের পিলার, বিম এবং ছাদে ফাটল ধরতে বেশি সময় লাগে না।
চউক অনেক সময় নিজে পরিদর্শন করে আবার কখনো আশপাশের লোকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে। তবে আইনে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণের ক্ষমতা চউকের নেই। তাই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করার পর তা অপসারণের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে চিঠির মাধ্যমে অবহিত করা হয়। চসিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ করে।
জানা যায়, বর্তমানে নগরে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১১১টি ভবন আছে। এর মধ্যে অনুমোদনহীন, নকশাবহির্ভূত, অনুমোদিত নকশা-শর্ত ভঙ্গ, ৮ তলার অনুমোদন নিয়ে ১০ তলা ও ১০ তলার অনুমোদন নিয়ে ১২ তলা ভবন নির্মাণ, ফ্লোর স্পেস বাড়ানো, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ইচ্ছামতো ভবন নির্মাণ এবং খাল-নালা ড্রেন দখল ও পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণ হয়েছে। এসবের কোনো সংখ্যা নেই।
দিনের পর দিন এসব গুরুতর অনিয়ম করেই চলছে ভবন নির্মাণ। অনুমোদনহীন ভবন নিরাপত্তার জন্য হুমকি, সঙ্গে ভূমিকম্প ও দুর্যোগ পরিস্থিতিতে বিপর্যয়ের ঝুঁকি। তবে সিডিএ অনিয়ম করে নির্মিত ও নকশাবহির্ভূত অংশ ভাঙার জন্য ৫০টি ভবন চিহ্নিত করে ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালনার উদ্যোগ নেয়। ইতোমধ্যে দুই অভিযানে ২২টি ভবনের নকশাবহির্ভূত অংশ ভাঙা, জরিমানা ও মালিক পালিয়ে যাওয়ায় দুটি ভবন সিলগালা করা হয়। এ ধরনের আরও ভবনের তালিকা তৈরি করবে চউক।
ইমারত নির্মাণ আইনের ৩(বি) ধারা অনুযায়ী অনুমোদনহীন ভবনের মালিককে কারণ দর্শানো নোটিস প্রদান করা হয়।
এরপর অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে ৩বি (৩) ধারা অনুযায়ী ভবন ভেঙে অপসারণ করার জন্য বলা হয়।
ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী নতুন ভবন নির্মাণকাজ শুরু বা স্থগিত কাজ শুরুর ১৫ দিন আগে চউককে জানাতে হয়। তবে অধিকাংশ মালিকই এ নিয়ম মানেন না। একই সঙ্গে নতুন ভবনের নকশা পরিবর্তন বা নিরাপত্তাব্যবস্থা লঙ্ঘন করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য।