যতই দিন যাচ্ছে বাংলার টেসলা খ্যাত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা হু হু করে বেড়েই চলেছে। অলিগলি ছাপিয়ে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতেও এখন অটোরিকশার রাজত্ব। সুযোগ পেলেই ফ্লাইওভারে উঠে পড়ছে। ছুটে চলছে উলটো পথেও। অটোরিকশার কারণে প্রায়ই ঘটছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
এই অটোরিকশাগুলো যাত্রীর অপেক্ষায় দখলে রাখছে বাসস্টপ থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সিগন্যাল পয়েন্টগুলো। এতে বাস, প্রাইভেট কার থেকে শুরু করে অন্য সব যানবাহনের গলার কাঁটা হয়েছে এই বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার যান। শুধু তাই নয়, পথচারীরাও বিরক্ত হয়ে উঠছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে ঝুঁকিপূর্ণ অটোরিকশার দৌরাত্ম্যে সড়কে চলা দায় হয়ে পড়েছে।
পরিবহনটির বেপরোয়া গতির কারণে দিন দিন বাড়ছে দুর্ঘটনা। এগুলোর নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশসহ প্রশাসন যেন অনেকটা অসহায়। বুয়েটের নকশা অনুসরণ করে অটোরিকশার নিরাপত্তা নির্ধারণ, নীতিমালা প্রণয়নসহ সরকার নানান উদ্যোগ নিলেও সবই স্থবির হয়ে পড়েছে। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এখন আর উপার্জনের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ নেই। কোনো নীতিমালা না থাকা এবং নিবন্ধনের প্রয়োজন না পড়ায় ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে যে যত পারছেন সড়কে নামাচ্ছেন। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
এক জরিপে উঠে এসেছে, রাজধানীর ৫০টি থানা এলাকায় ১০ লাখের বেশি অটোরিকশা রয়েছে। আর গ্যারেজের সংখ্যা ১৫ হাজারেরও বেশি। সবচেয়ে বেশি ৯ শতাধিক গ্যারেজ রয়েছে কামরাঙ্গীরচরে। এর পরই রয়েছে মোহাম্মদপুর, উত্তরা, মিরপুর, রামপুরা ও বাড্ডায়। মোহাম্মদপুরে ৬৫০টি ও উত্তরায় ৬০০টি অটোরিকশার গ্যারেজ রয়েছে। এসব গ্যারেজের মধ্যে অনেকগুলোতেই আবার নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি করা হচ্ছে অটোরিকশা। আগের প্যাডেল রিকশার কারিগরদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এনে অটোরিকশা তৈরি করছেন গ্যারেজ মালিকরা। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সূত্র বলছে, নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ৫০০-৭০০ নতুন অটোরিকশা প্রতিদিন সড়কে নামছে।
ঢাকা মহানগর অটোরিকশা মালিক সমিতির সহসভাপতি মীজানুর রহমান বলেন, অটোরিকশার বিষয়টি সমাধানে আমাদের বিভিন্ন সময় মিটিংয়ে ডাকা হয়। এরপর আর খোঁজ নেওয়া হয় না। তবে আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি, সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে মাত্র ২ লাখ ২০ হাজার রিকশাকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া আছে। শুধু এই রেজিস্ট্রেশনগুলোর বিপরীতেই অটোরিকশা নামতে দেওয়ার অনুমতি দিলে এমনিতেই ৭ লাখেরও বেশি অটোরিকশা কমে যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুধু ব্রেকিংয়ে জোর দিলেই এটি আরও নিরাপদ হয়ে উঠবে। এটি বাদ দিয়ে বুয়েটের নকশা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যা করা হচ্ছে তাতে আমাদের কারও জন্যই লাভজনক হবে না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মহাব্যবস্থাপক (পরিবহন) মোহাম্মদ নাছিম আহমেদ বলেন, বুয়েট অটোরিকশার যে নকশা করেছে সেটিতে আরও কিছু সংযোজন করে অনুমোদন দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। প্রতিটি অটোরিকশা যাতে ওই মানের হয় এবং চালকরা যাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয় সে জন্য আমরা কাজ করছি। এজন্য মাস্টার ট্রেইনার নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অন্য পেশার লোক প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করায় আমরা কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রেখেছি। তিনি আরও বলেন, ৬০-৭০ হাজার টাকার অটোরিকশাগুলো ১-২ বছরের বেশি স্থায়ী হবে না। ফলে ঢাকার দূষণেও বিপর্যয় ডেকে আনবে এগুলো। আপাতত আমরা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) ড. মো. জিললুর রহমান বলেন, কর্মসংস্থানের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তবে প্রধান সড়কগুলো অটোরিকশামুক্ত রাখতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয়। প্রতিদিনই কয়েক শ অটোরিকশা ডাম্পিং করা হয়। ট্রাফিক বিভাগের জনবল দিয়ে সব স্পটে কঠোর নজরদারি সম্ভব নয়। এর পরও সরকারের যে কোনো নির্দেশনা পালন করতে ট্রাফিক পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।