গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দেওডোবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আল আমিন (১০)। জন্ম থেকে ঠোঁট কাটা ছিল তার। ধারদেনা করে চিকিৎসার মাধ্যমে ঠোঁট জোড়া লাগানো হয়। তবে তার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হাঁটাচলায়। সে দুই পায়ে দাঁড়াতে পারে না। হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করতে হয়। তবু পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহের কাছে হার মেনেছে তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা।
আল আমিন উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের দেওডোবা এলাকার মফিজুল হোসেনের ছেলে। বাবা দিনমজুরের ও মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। ছেলের শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় চিন্তিত থাকলেও পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকায় বড় হয়ে আল আমিন সরকারি চাকরি করবে, সংসারের হাল ধরবে এমন স্বপ্ন দেখছেন বাবা-মা।
দেওডোবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আল আমিনের বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে। পাকা এই পথটুকু হামাগুড়ি দিয়ে চলতে হয় তাকে। এতে পায়ে যন্ত্রণাও সইতে হয়। কখনো হাঁটুর চামড়া উঠে গিয়ে রক্ত বের হয়। তবু নিয়মিত স্কুলে যায় সে। আল আমিন জানায়, অন্য শিশুদের মতো তারও ছুটে বেড়াতে ইচ্ছা করে। সহপাঠীদের সঙ্গে খেলতে ইচ্ছা করে। কিন্তু প্রতিবন্ধকতার কারণে অনেকেই তার সঙ্গে খেলতে বা পথ চলতে চায় না। অনেকটা বাধ্য হয়েই একাকী চলে সে। তার ইচ্ছা, বড় হয়ে সে শিক্ষক হবে।
বাবা মফিজুল বলেন, আমার ছেলের লেখাপড়া করার খুব ইচ্ছা। হামাগুড়ি দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যায়। ঠিকভাবে খাওয়াতেও পারি না তাকে। মা সুফিয়া বলেন, আল আমিনের গোসল করা থেকে শুরু করে সব কাজে সহযোগিতা করতে হয়। অভাবের সংসারে তাকে লেখাপড়া করানো কঠিন। কারও সহযোগিতা পেলে মন ভরে দোয়া করতাম।
দেওডোবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মানিক মিয়া ও মিজানুর রহমান জানান, আল আমিন লেখাপড়ায় বেশ মনোযোগী। সে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে। যত্ন নিলে সে ভবিষ্যতে লেখাপড়ায় ভালো করবে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার রফিকুজ্জামান খান বলেন, আল আমিনের বিষয়টি জেনেছি। তাকে উপজেলা সমাজ সেবা দপ্তর থেকে ভাতাও দেওয়া হচ্ছে। তার আর্থিক সহায়তার বিষয়টি উপজেলা সমাজ সেবা অফিস দেখবে। আমরা তার জন্য একটি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থার চেষ্টা করব।