যুক্তরাষ্ট্রকে বলা হয় অভিবাসীদের দেশ। ওই দেশের আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের নিধন করে ইউরোপ থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসা লোকরাই সে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা। অতীত যা-ই থাক বিশ্ববাসীর সমীহ অর্জনে শুরু থেকেই মানবাধিকারের সোল এজেন্ট হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করেছে দেশটি। দুনিয়ার কোনো দেশে নিজেদের স্বার্থ বিঘ্নিত হলেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অজুহাতে সে দেশের সরকার পতন ঘটানোর অভিযোগ রয়েছে ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে। অভিবাসীদের নিয়ে গড়ে ওঠা এবং তাঁদের মেধায় বিশ্বসেরা অবস্থানে পৌঁছানো যুক্তরাষ্ট্র এখন অভিবাসীদের জন্য সাক্ষাৎ নরকে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত বা মধ্য আয়ের যেসব দেশের লোকজন মার্কিন মুল্লুকের বাসিন্দা হওয়ার জন্য ভিটেমাটি বিক্রি করে সে দেশে ঠাঁই নিয়েছিলেন এবং নাগরিকত্ব লাভের জন্য বছরের পর বছর ধরে ক্লান্তিকর প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন তাঁদের আটক করে হাতকড়া ও পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় বিমানে করে ফেরত পাঠানো হচ্ছে স্বদেশে। যুক্তরাষ্ট্রের অভদ্রোচিত ও আনমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে কোনো কোনো দেশ। তারা এ অভিবাসী বহন করা বিমানকে অবতরণের অনুমতি দিতে আপত্তি করেছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পাশের দেশ কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট চলতি বছরের জানুয়ারিতে অবৈধ অভিবাসীভর্তি দুটি বিমান সে দেশে নামার অনুমতি দেননি। তিনি সাফ সাফ বলেন, তাঁর দেশের অভিবাসীদের অবশ্যই সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে ফেরত পাঠাতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশি অভিবাসীদের হাতে হাতকড়া ও পায়ে শিকল পরিয়ে বিমানে ফেরত পাঠানো হচ্ছে এবং আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার কোনো প্রতিবাদ ছাড়াই তাঁদের গ্রহণ করছে। ১৬ মাস আগে নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন বলা হচ্ছিল দুনিয়াজুড়ে দেশের সম্মান বাড়বে। সারা দুনিয়া তাকিয়ে থাকবে আমাদের দিকে। কিন্তু ‘একে একে নিভেছে দেউটি’ অবস্থার শিকার হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ। দেশের রপ্তানিতে ভাটা, জনশক্তি রপ্তানি কমছে তো কমছে। এখন বাংলাদেশের নাগরিকদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র অসম্মানজনক আচরণ করতেও পিছপা হচ্ছে না। রাজনৈতিক সরকার থাকলে জাতিকে এ অপমান সহ্য করতে হতো না বলে আমাদের বিশ্বাস।