ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ধীরগতি হওয়ায় ভোগান্তিতে নগরবাসী। বিশেষ করে মালিবাগ থেকে কতুবখালী অংশের কাজ ধীরগতিতে চলায় মালিবাগ সড়কে চলাচলকারীরা যানজটে অতিষ্ঠ। মালিবাগ থেকে খিলগাঁও সড়কটির মাঝখানে ঘিরে পিলার নির্মাণের কারণে সড়কটি সরু হয়ে গেছে। ফলে সার্বক্ষণিক যানজট লেগেই থাকে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, মালিবাগ থেকে খিলগাঁও সড়কটির অর্ধেকাংশ ঘিরে রাখার কারণে সড়কটি সরু হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন এভাবে রয়েছে। কিছুদিন কাজ হয়, আবার বন্ধ রাখে। এভাবে চলে গেছে তিন বছর। ফলে প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে সড়কটিতে।
সরেজমিন দেখা যায়, মালিবাগ রেলগেট থেকে খিলগাঁও পর্যন্ত রেললাইনের দুই পাশে পিলার নির্মাণ করছে এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে একটি অংশের পিলার মালিবাগ-খিলগাঁও সড়কের মধ্যে নির্মাণ করা হচ্ছে। এ পিলার টিনশেড দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। এতে সড়কের দুই তৃতীয়াংশ জায়গা এক্সপ্রেসওয়ের দখলে চলে গেছে। ফলে তিন লেনের সড়ক এক লেন হয়ে গেছে। দুই পাশে ছয় লেনের সড়কটি দুই লেন হওয়ায় গাড়ির জটলা সৃষ্টি হয়। একই সঙ্গে এই সড়কটিতে গণপরিবহন চলার পাশাপাশি আন্তঃজেলা বাসও চলাচল করছে।
এতে সড়কে পরিবহনের সংখ্যা আরও বাড়ার কারণে যানজট তৈরে হচ্ছে। এ ছাড়া মালিবাগ রেলগেট মোড়ে ব্যাটারি রিকশার আধিপত্য থাকায় যানজট সৃষ্টি হওয়ার অন্যতম কারণ বলছেন ভুক্তভোগীরা।
খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা মো. জাহিদ ইকবাল গুলশানে একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। প্রতিদিন বাসে যাতায়াত করেন তিনি। জাহিদ ইকবাল বলেন, খিলগাঁও থেকে মালিবাগ রেলগেট পার হতে চলে যায় এক ঘণ্টা। এর অন্যতম কারণ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ। এক লেনে গাড়ি চলাচল করায় তীব্র যানজটে পড়তে হয়। এক্সপ্রেসওয়ের কাজ কবে শেষ হবে? আর মানুষের ভোগান্তি শেষ হবে কবে? এই প্রশ্নগুলো সরকারের কাছে থাকল।
এ ব্যাপারে এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আখতার বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। কারওয়ান বাজার থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত সব জায়গায় কাজ চলছে। মালিবাগ রেলগেট এলাকায় পিলারের ওপরে গার্ডার বসানো হলে ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলা হবে। এখন একটু ভোগান্তি হচ্ছে। তা শিগগির লাঘব হবে বলে আশা করি। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটির এখন পর্যন্ত ৭৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। মেয়াদ আছে আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
জানা গেছে, তিন থেকে সাড়ে তিন বছর সময়ে বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্প ১৫ বছরেও শেষ হয়নি। বিদেশি তিন কোম্পানির অর্থনৈতিক জটিলতায় গত বছর প্রায় ১০ মাস বন্ধ থাকার পর ডিসেম্বরে নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে। এখন চাইনিজ কোম্পানির তত্ত্বাবধানে প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) মাধ্যমে ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ ভিত্তিক (পিপিপি) এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর চুক্তি সংশোধন করা হয়। এই প্রকল্পের ৩১টি র্যাম্পের দীর্ঘ ২৭ কিলোমিটার। মূল এক্সপ্রেসওয়ের ২০ কিলোমিটার ও র্যাম্পের দৈর্ঘ্য মিলিয়ে প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৭ কিলোমিটার। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক্সপ্রেসওয়ের প্রতি কিলোমিটারের নির্মাণ খরচ হয়েছে প্রায় ১৯১ কোটি টাকা। পিপিপি প্রকল্পে সাধারণ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পুরো টাকা বিনিয়োগ করে। তবে এ প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকারও প্রকল্পের ২৭ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে। যার পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। প্রকল্প চালু হওয়ার সময় থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় করবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।