জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা- এই চার মূল ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো বাংলাদেশে বারবার হোঁচট খেয়েছে গণতন্ত্র। গত ৫৪ বছরে অনেকটা সময়জুড়ে দেশের মানুষ পেয়েছে কখনো একদলীয়, কখনো সেনা, কখনো স্বৈরশাসন। জনগণের মধ্যে প্রকৃত ঐক্য ও একাত্মতার অনুভূতি গড়ে ওঠেনি; যা জাতীয়তাবাদের পূর্বশর্ত। সামাজিক ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর হওয়া তো দূরের কথা, বরং বেড়েছে। জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জিত হয়নি, যা ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম মূল চেতনা। আর গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত, জনগণের সরকার। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে বিগত অর্ধশতাব্দীতে গণতন্ত্র শিকেয় তুলে রাখা হয়েছে বাকশালে, সেনাশাসনে এবং প্রহসনের নির্বাচনে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা জগদ্দল স্বৈরশাসনে। সুষ্ঠুভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে সংবিধান সংশোধন করে অন্তর্বর্তী সরকারব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হয়। যারা এ উদ্যোগের অংশীজন ছিল, পরে তারাই ফের সংবিধানে সংশোধন এনে ওই আইন বাতিল করে রাতের ভোট, একলা ভোট, ডামি ভোটে ক্ষমতা জবরদখল করে। দেশটা পৈতৃক বিবেচনায় নিয়ে সপরিবার ও সপারিষদ বেশুমার লুটপাট, পাচারে প্রায় দেউলিয়া করে ছাড়ে। দুর্নীতি-দুরাচার, দমনপীড়নের মাত্রা ছাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত জনরোষে পতিত হয়েছে। জুলাই বিপ্লবের পর প্রায় ১৬ মাস রাষ্ট্র পরিচালনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। শুধু সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করার স্বার্থে সম্প্রতি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। চতুর্দশ জাতীয় নির্বাচন থেকে এটা কার্যকর হবে। গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশে, গণতন্ত্র পাহারা দিতে এসব করতে হচ্ছে। একদলীয় শাসন থেকে দেশকে গণতন্ত্রে ফিরিয়েছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তাঁর দল বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও গণতন্ত্রের সুদৃঢ় ভিত্তির ওপরই স্থাপন করলেন দেশের ভালোমন্দের ভার। দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন, নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের হাতেই নির্ধারিত হওয়া উচিত দেশের ভবিষ্যৎ। বর্তমানে আলোচিত দুটি বিষয়- এলডিসি থেকে উত্তরণ এবং বন্দর সংস্কার প্রসঙ্গে সোমবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি এসব কথা বলেন। দেশ-জাতির দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থসংশ্লিষ্ট ও স্পর্শকাতর সব বিষয়ই গণতান্ত্রিক সরকারের অধীনে, সংসদীয় বিধি মেনে হওয়া উচিত। এবং সেই সরকারকে দেশের স্বার্থ ও মর্যাদা সর্বোচ্চ গুরুত্বে রক্ষা করেই, সে গুরুদায়িত্ব্ পালন করতে হবে। সেখানে সামান্য ব্যত্যয়-বিচ্যুতি-স্খলন চলবে না।