নওগাঁর বরেন্দ্র অধ্যুষিত সাপাহার উপজেলায় ক্রমবর্ধমান শুষ্কতা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া এবং সেচ সংকট মোকাবিলায় ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সকাল ১০টায় সাপাহার প্রেসক্লাবে বসুন্ধরা শুভসংঘ সাপাহার শাখার আয়োজনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বসুন্ধরা শুভসংঘ সাপাহার শাখার সভাপতি মনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় স্থানীয় শিক্ষক, কৃষক প্রতিনিধি, পরিবেশকর্মী, সাংবাদিক, কলেজশিক্ষার্থী ও শুভসংঘের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
সভায় বক্তারা জানান, দেশের অন্যতম শুষ্ক অঞ্চল নওগাঁর বরেন্দ্র এলাকায় বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত গত কয়েক বছরে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমেছে। অপরিকল্পিত গভীর নলকূপ স্থাপন এবং জলাধার না থাকার কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিবছর ৭ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে যাচ্ছে। এতে অনেক গভীর নলকূপ অকার্যকর হয়ে পড়ছে এবং উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিচ্ছে।
কৃষক প্রতিনিধিরা বলেন, পানির ঘাটতির কারণে প্রায় প্রতিবছর বোরো মৌসুমে ধানের জমিতে ফাটল ধরে, আম বাগান ও সবজি চাষ ব্যাহত হয় এবং গবাদিপশুর খাদ্য সংকট গভীর হয়। নদী-খাল-বিল ভরাট হয়ে যাওয়ায় প্রাকৃতিকভাবে পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না, যা স্থানীয় কৃষি, পরিবেশ ও অর্থনীতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
বসুন্ধরা শুভসংঘ সাপাহার শাখার উপদেষ্টা ও কালের কণ্ঠ প্রতিনিধি তছলিম উদ্দীন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবার জীবনে পড়ছে। সাপাহারকে শুষ্কতার দুষ্টচক্র থেকে বের করতে হলে গণসচেতনতার পাশাপাশি কার্যকর পানি ব্যবস্থাপনা জরুরি।
তিনি নবীন প্রজন্মকে পরিবেশ রক্ষা, বৃক্ষরোপণ, প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ এবং পানি অপচয় রোধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সভায় সাপাহারের জলসংকট মোকাবিলায় কয়েকটি বাস্তবসম্মত সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে ছিল—
বাড়ি, অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রেইনওয়াটার হার্ভেস্টিং বাধ্যতামূলক করা
পুকুর, খাল ও বিল পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি
রাস্তার পাশে রিচার্জ পিট নির্মাণ
বোরোর পরিবর্তে কম পানি লাগে এমন ফসল এবং খরা-সহনশীল জাত (ব্রি ধান-৫৬, ৫৭) চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা
আম বাগানে স্মার্ট সেচ ও জৈব সার ব্যবহারে সহযোগিতা
বিএমডিএ–এর অধীনে আরও গভীর নলকূপ স্থাপন এবং সমবায় সেচ প্রকল্পে ভর্তুকি বাড়ানো
স্কুল–কলেজে জলবায়ু শিক্ষা ক্লাব গঠন ও মাসিক স্বেচ্ছাশ্রম কর্মসূচি আয়োজন
সভায় বসুন্ধরা শুভসংঘের উপদেষ্টা তছলিম উদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, সাপাহার উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আনছারী, প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক বাবুল আকতারসহ স্থানীয় সাবেক শিক্ষক ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে অংশগ্রহণকারীরা সাপাহারকে জলবায়ুবান্ধব অঞ্চলে রূপান্তরের লক্ষ্যে আজ থেকেই সচেতনতা বৃদ্ধি ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বিডি-প্রতিদিন/মাইনুল