অন্ধকার গুহার ভিতর তারার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নীল আলো। প্রথম দেখায় মনে হয় আকাশটা যেন নিচে নেমে এসেছে। কিন্তু এগুলো কোনো তারার ঝিলিক নয়, এগুলো হলো শিকারি কিট গ্লো ওয়ার্ম, এক ধরনের জৈব-আলোক উৎপাদনকারী লার্ভা, যারা আলো ব্যবহার করে শিকার ধরে।
গ্লো ওয়ার্ম আসলে এক ধরনের ছোট মাছির লার্ভা। লার্ভা পর্যায়েই তারা সবচেয়ে বেশি আলো জ্বালে। আলো জ্বালানোর মূল উদ্দেশ্য হলো শিকার আকর্ষণ করা। লার্ভা তাদের শরীর থেকে আঠালো সুতো বের করে গুহার ছাদ থেকে ঝুলিয়ে রাখে। নীলাভ-সবুজ আলো দেখে পোকামাকড় সুতোতে এসে আটকে যায়। এরপর লার্ভা শিকারকে টেনে নিয়ে খেয়ে ফেলে। এ কারণেই এদের ‘শিকারি কিট’ বলা হয়।
প্রকৃতিতে টিকে থাকার জন্য গ্লো ওয়ার্ম গুহার অন্ধকার ও আর্দ্র পরিবেশকে বেছে নিয়েছে। আর্দ্রতা ঝুলিয়ে দেওয়া সুতো শুকাতে দেয় না। অন্ধকারে আলো আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। আর স্থির বাতাস সুতো ভেঙে পড়ার ঝুঁকি কমায়। নিউজিল্যান্ডের ওয়াইতোমো কেভস বা অস্ট্রেলিয়ার বনাঞ্চলের স্যাঁতসেঁতে গুহায় এদের সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
জীবনচক্রের বেশির ভাগ সময়ই এরা কাটায় লার্ভা হিসেবে (প্রায় ছয় মাস থেকে এক বছর)। পরে পিউপা হয়ে অল্প সময়ের জন্য প্রাপ্তবয়স্ক মাছিতে পরিণত হয়। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় তাদের মুখ থাকে না, ফলে তারা খাবারও খেতে পারে না। পুরো জীবনটাই তখন শুধু মিলন ও ডিম পাড়াকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। ছোট্ট এই জীবগুলো অন্ধকার গুহাকে নিজের মতো করে সাজিয়ে তোলে এক অপূর্ব আলো-নাট্যে। তাদের আলো শুধু বিস্ময়ই নয়, প্রকৃতির সূক্ষ্ম কৌশল আর টিকে থাকার লড়াইয়ের এক নীরব গল্পও বলে।