ভালো নেই দেশের অর্থনীতি। জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে একের পর এক আন্দোলন ও দাবিদাওয়ার মচ্ছব শুরু হয়েছে দেশজুড়ে। আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে দেশ ফিরে গেছে মাৎসন্যায়ের কালো অধ্যায়ে। বিনিয়োগ ক্ষেত্রে চলছে অস্থিরতা। মূল্যস্ফীতি কমার বদলে বেড়েছে। উচ্চ সুদের শৃঙ্খলে আটকা পড়েছেন শিল্পোদ্যাক্তারা। দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ার বদলে কমেছে। ব্যবসায়ীরা লাভ দূরের কথা টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক ব্যবসা। অসংখ্য কলকারখানা বন্ধের পাশাপাশি বেকারত্বের ঘানি টানছে কয়েক লাখ মানুষ। ব্যবসাবাণিজ্যের পরিবেশ রুদ্ধ হওয়ার অপপ্রভাব পড়েছে সরকারের রাজস্ব আয়ে। চলতি অর্থবছরের চার মাসেই রাজস্ব ঘাটতি ১৭ হাজার ২২০ কোটি টাকা। আয় মারাত্মকভাবে হ্রাস পাওয়ায় আয়কর দিতে পারছেন না করদাতারা। সবশেষ হিসাবে রিটার্ন জমা করদাতাদের মধ্যে ৮৮ শতাংশই শূন্য রিটার্ন জমা দিয়েছেন। উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় ভ্যাট বেশি পাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে খরা চলছে। আমদানি শুল্কেও মোটা অঙ্কের ঘাটতি পড়ছে। ফলে সরকারের নিজস্ব আয়ের জায়গাটিও ঝুঁকিতে পড়েছে। রাজস্ব আয়ের তিনটি অনুবিভাগেই নেতিবাচক চিত্র। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, অক্টোবর মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১৭ শতাংশে। তবে বাজারদরের আগুনে ক্রেতার বাজারের ব্যাগ খালিই থাকছে। ঘরভাড়া, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যয়ের চাপ বেড়েছে। অন্যদিকে উচ্চ সুদের হার বহাল রেখে মূল্যস্ফীতি কমানোর নীতির কাঙ্ক্ষিত ফল আসেনি।
চলতি শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে বাংলাদেশের জিপিও প্রবৃদ্ধি ছিল ঈর্ষণীয়। করোনাকালেও বাংলাদেশের অর্থনীতি মার খায়নি। ইউক্রেন যুদ্ধ ও গাজায় ইসরায়েলি আক্রমণে মন্দার আঘাতে জর্জরিত হয় বিশ্ব অর্থনীতি। বাংলাদেশেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। রাজনৈতিক সরকার সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ততটা গুরুত্ব না দেওয়ায় তাদের পতন অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে লাগাতারভাবে। নিজেদের সুনামের স্বার্থে দেরিতে হলেও তারা সক্রিয় হবে- এমনটিই প্রত্যাশিত।