রূপকথার ভূতের মতো উল্টো পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। দারিদ্র্যমোচনে বাংলাদেশ একসময় রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হতো। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এ ব্যাপারে প্রশংসার ডালি সাজিয়েছে। সে সুনাম ধরে রাখা সম্ভব হয়নি বাংলাদেশের পক্ষে। এমনকি শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের হাল ধরার পরও দেশের মানুষের দুর্ভোগ কমার বদলে বেড়েছে। সুশাসন, জবাবদিহিতার ১৬ মাসেও প্রায় সব ক্ষেত্রেই উল্টো পথে হাঁটা নিয়তির লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অনুমিত হিসাবে ২০২৫ সালে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের সম্ভাব্য হার হতে পারে ২১ শতাংশের কিছু বেশি। সেই হিসাবে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা এখন ৩ কোটি ৬০ লাখ। আর দেশের প্রায় ৬ কোটি ২০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০-২০২২ সালে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে দারিদ্র্য হ্রাস পায়। ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ দারিদ্র্য এবং ৯০ লাখ মানুষ অতি দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসে। তবে ২০১৬ সাল থেকে দারিদ্র্য কমার গতি ধীর হয়েছে। ২০১০-২০২২ সালে চরম দারিদ্র্য ১২ দশমিক ২ থেকে কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ এবং মাঝারি দারিদ্র্য ৩৭ দশমিক ১ থেকে কমে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে আসে। ২০১৬ সালের পর থেকে প্রবৃদ্ধির সুফল পেয়েছেন ধনীরা। ফলে আয়বৈষম্য বেড়েছে। কৃষির ওপর ভর করে গ্রামীণ এলাকাগুলো দারিদ্র্য হ্রাসে ভূমিকা রেখেছে। একই সময়ে শহরে দারিদ্র্য হ্রাসের হার কমেছে। ২০২২ সাল থেকে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন শহরে বাস করতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে দারিদ্র্য বৃদ্ধির পেছনে সবচেয়ে দায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়া। উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও বাজারদর অনুযায়ী মজুরি বৃদ্ধি না পাওয়াও দায়ী। জুলাই অভ্যুত্থানের পর কর্মসংস্থানের সুযোগ রুদ্ধ করাকে সুশীল সরকারের নিয়ন্ত্রক শক্তি বলে কথিত একটি মহল কর্তব্য বলে ভাবছে। বন্ধ হচ্ছে একের পর এক কলকারখানা। ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের দেখা হচ্ছে বাঁকা চোখে। চাঁদাবাজ ও মববাজদের জন্য ব্যবসা করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দারিদ্র্য বাড়ার জন্য যা অনেকাংশে দায়ী।