প্রথমবারের মতো প্রবাসী বিএনপি এবং বিএনপি নেতাদের সঙ্গে অনলাইনে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নিলেন ব্যারিস্টার জাইমা রহমান। বৈঠকে তিনি নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘এত কষ্ট করে যে আপনারা এসেছেন, এত কাজ যে করছেন—আপনাদের চিন্তা-ভাবনা, কি অসুবিধা-সুবিধা, সেটাও বললেন। কয়েকটা বিষয়ের ওপর আলাপ করা হয়েছে। রিজভী আংকেল নোট নিয়েছেন, পাবেল আংকেলও।
আমরা সিনসিয়ারলি দেখি কতটুকু করতে পারি। অবশ্যই কাজটায় যেন আমরা একসঙ্গে হয়ে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হচ্ছেন জাইমা রহমান এগিয়ে যাই। সবার সঙ্গে সবার যোগাযোগ আছে, সেটা করা উচিত। আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করতে চাই—যা সম্ভব।
খোকন আংকেল খুব সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তা শুনে যা যা করা উচিত, সেটা যেন আমরা দেরি না করি। আমাদের কাছে যে স্ক্যাজুয়ালটা আছে, ওইভাবেই, ওই অনুযায়ী প্যারাটাইজ করে কাজ করা উচিত।’
তাঁর এই বক্তব্যে পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে—সমন্বিত নেতৃত্ব, যোগ্যতা, শক্তি ও বুদ্ধিমত্তার সমন্বয়ে দেশের উন্নয়নের প্রতিটি কাজ আরো সুসংগঠিতভাবে সম্পন্ন করা যায়। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জাইমা রহমান এক উদীয়মান নাগরিক নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে উঠে আসছেন।
তিনি পারিবারিক ধারাবাহিকতার ওপর নির্ভর করে নয়, বরং নিজের স্বমহিমা, চিন্তার স্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক মূল্যবোধের প্রতি অঙ্গীকারের মাধ্যমে সামনে আসছেন। মুক্ত গণতন্ত্র, মত প্রকাশ, মানবাধিকার, জবাবদিহি ও শক্তিশালী নাগরিক সমাজ—এই পাঁচটি ভিত্তিকে তিনি নিজের বক্তব্য এবং উপস্থিতির মাধ্যমে বারবার তুলে ধরছেন।
নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক চেতনায় তিনি যে জায়গা তৈরি সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন, তা কেবল পরিচয়ের কারণে নয়, বরং যুক্তি, ভিশন এবং দায়িত্ববোধের কারণে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে চিন্তাশীল, শিক্ষানির্ভর ও মূল্যবোধভিত্তিক নেতৃত্বের যে প্রয়োজন, জাইমা রহমান সেই শূন্যস্থান পূরণের সম্ভাব্য শক্তিশালী মুখ।
জাইমা রহমান ২৬ অক্টোবর ১৯৯৫ সালে ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর শৈশব কাটে ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মইনুল সড়কের বাসায়, যেখানে তাঁর দাদি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া থাকতেন। এই বাসায় তাঁর মা-বাবাও থাকতেন। জাইমা রহমান ঢাকা শহরের বারিধারার আইএসডিতে (ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অব ঢাকা) ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা শুরু করেন।
২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে এক-এগারোর ঘটনাবলি-পরবর্তী সময়ে, ১১ সেপ্টেম্বর তিনি তাঁর মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাজ্যে চলে যান। সেখানে তিনি লন্ডনের ম্যারি মাউন্ট গার্লস স্কুল থেকে ‘ও’ লেভেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি লন্ডনের কুইন ম্যারি ইউনিভার্সিটিতে আইন বিভাগে ভর্তি হয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেন। পরে যুক্তরাজ্যের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান ‘ইনার টেম্পল’ থেকে বার-অ্যাট ল সম্পন্ন করেছেন জাইমা রহমান।
শৈশবে জাইমা রহমান সুখের দিন কাটালেও রাজনৈতিক কারণে তাঁর পরবর্তী জীবন ছিল দুঃখ-কষ্টে পরিপূর্ণ। তবে এই দুঃখের মধ্যেও তিনি তাঁর বাবা তারেক রহমান ও মা জুবাইদা রহমানের অমূল্য স্নেহ, মমতা ও পথপ্রদর্শনে নিজেকে এক দৃঢ়, আত্মবিশ্বাসী এবং যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন। লন্ডনে কাটানো সময়টা তাঁর জন্য চ্যালেঞ্জের হলেও সেই চ্যালেঞ্জগুলোই তাঁকে মনের দৃঢ়তা এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রেরণা দিয়েছে। মা-বাবার দিকনির্দেশনায় জীবনের কঠিন সময়গুলোকে শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে তিনি আজ নিজেকে একজন প্রতিশ্রুতিশীল এবং বিশ্বমানের ব্যক্তিত্ব হিসেবে তৈরি করেছেন।
গত ১১ জানুয়ারি ২০২৫ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে মার্কিন কংগ্রেসের আয়োজিত ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’ কমিটি চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানায়। ১৯৫৩ সাল থেকে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে বিশ্বনেতারা অংশ নেন।
ফলে তারেক রহমানের প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট অনুষ্ঠানে যোগ দেন। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণে রাজধানীর ওয়াশিংটন ডিসিতে গত ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি এই ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট অনুষ্ঠিত হয়।
ব্যারিস্টার জাইমা রহমান যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে উইমেনস ফেলোশিপ ফাউন্ডেশনের নেত্রী রেবেকা ওয়াগনার ও অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং বিশ্বশান্তি বিষয়ক নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়।
ওই সময় বিএনপির একাধিক নেতা বলেছিলেন, এই অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাইমা রহমান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দলকে প্রতিনিধিত্ব করবেন, যা তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে আরো উজ্জ্বল করবে। ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত এই সংলাপে তিনি বিশ্বনেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পেয়েছেন, যা তাঁর জন্য গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা হবে।
মা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যজনিত কারণে তারেক রহমান অনুষ্ঠানে যেতে না পারলেও তাঁর কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন, যা তাঁর রাজনীতিতে প্রথম পদক্ষেপ ছিল।
বিএনপি নেতারা মনে করছেন, রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হিসেবে তাঁর রাজনীতিতে আসা স্বাভাবিক এবং ভবিষ্যতে তিনি বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবেন। সিনিয়র নেতারা জাইমা রহমানের মধ্যে খালেদা জিয়ার প্রতিচ্ছবি দেখছেন। তাঁরা বলেছেন, ‘তিনি রাজনীতিতে এলে বাংলাদেশের রাজনীতি আরো শক্তিশালী হবে।’
২৩ নভেম্বর ২০২৫ জাইমা রহমানের ‘অনলাইনে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে বিএনপি ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অভিনন্দন জানানো অব্যাহত রেখেছেন।
নেটিজেনরা ফেসবুকে জাইমা রহমানের প্রশংসা করে লিখেছেন ‘জিয়া পরিবারের সুনাম ধরে রাখবে, বিএনপির ভবিষ্যৎ কর্ণধার, শহিদ জিয়ার যোগ্য উত্তরসূরি’ ইত্যাদি মন্তব্য।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নানা চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র এবং রাজনৈতিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বিদেশে থেকে দলের হাল ধরে রেখেছেন এবং বিএনপিকে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তারেক রহমান শুধু নিজেকে নয়, তাঁর একমাত্র কন্যা জাইমা রহমানকেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম এক যোগ্য প্রতিশ্রুতিশীল ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলছেন। তাঁর লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি উন্নত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা, যাতে তার পরবর্তী প্রজন্মের নেতা হিসেবে জাইমা রহমান এটি অব্যাহত রাখতে পারেন।
জাইমা রহমান আইন ও রাজনীতি বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সমৃদ্ধ শিক্ষা লাভ করেছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, জাইমা রহমান একদিন বাংলাদেশের নেতৃত্বে আসবেন এবং দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, যেখানে জনগণের কল্যাণ হবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। পাশাপাশি তিনি নিরাপদ পৃথিবী এবং মানবতা রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন।
অভিনন্দন, অভিবাদন ও শুভ কামনা প্রিয় জাইমা রহমান। আপনার প্রতিটি পদক্ষেপে সাফল্য ও অর্জন ছড়িয়ে পড়ুক জনগণের কল্যাণে।
লেখক: যুগ্ম সম্পাদক, কালের কণ্ঠ