শিক্ষাঙ্গনেও ছোবল বসিয়েছিল স্বৈরাচারী সরকার। দুর্বিনীত দুর্নীতির নখ-দাঁত বসানো হয়েছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালন কাঠামোয়। তথ্য বলছে, ২০২২ সালে মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের অধীন প্রায় তিন হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে সরকার। পরের বছর ৩৪৬টি। তখন জোর অভিযোগ ওঠে, এগুলোর অধিকাংশই রাজনৈতিক বিবেচনায়, ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপি-নেতাদের বিশেষ সুপারিশ ও তদবিরে করা হয়েছিল। এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলোর এমপিওভুক্ত হওয়ার উপযুক্ততাই ছিল না। অন্যদিকে প্রাপ্য অনেক প্রতিষ্ঠান বঞ্চিত হয়। এ সংখ্যা তখন ছিল অন্তত তিন হাজার। আশাহত-বঞ্চিত হন ব্যাপকসংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারী। যাঁরা বিনা বেতনে বা নামমাত্র সম্মানি নিয়ে বছরের পর বছর পাঠদান করছেন। প্রতিষ্ঠানগুলোকে তিলে তিলে গড়ে তুলছেন। এমপিওভুক্ত হলে প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতনের মূল অংশ এবং কিছু ভাতা সরকার থেকে পান। তা সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় নগণ্য। এবং পরিবারপরিজন নিয়ে ভদ্রস্থ জীবনযাপনের জন্য যথেষ্ট না হলেও, কিছুটা সহায় হয় বেসরকারি শিক্ষকদের। সেখানেও রাজনৈতিক দস্যুতা। শিক্ষাব্রতীদের হক ছিনতাই! এ নিয়ে ক্ষোভ, আক্ষেপ, হতাশা দীর্ঘদিনের। এখন তাদের জন্য একটা সুখবর আসছে। অন্তর্বর্তী সরকার, বেসরকারি নন-এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির উদ্যোগ নিয়েছে। প্রয়োজনীয় সংস্কারে, চূড়ান্ত করা হয়েছে জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা। যে কোনো সময় তা জারি করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর এমপিওভুক্তির আবেদন আহ্বান। তার থেকে উপযুক্ততা যাচাইবাছাই শেষে সরকারের আর্থিক সক্ষমতা সাপেক্ষে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে। এ সিদ্ধান্তে স্বভাবতই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত শিক্ষক-কর্মীরা। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং শিক্ষকদের সন্তুষ্টচিত্তে শিক্ষাদানের উপযোগ সৃষ্টির স্বার্থে, সরকারের এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মীদের পাওয়া সুযোগসুবিধার বিচারে, বেসরকারিদের পিছিয়ে থাকার দূরত্ব কতটা কমিয়ে আনা যায়, তার বিবেচনা এবং দেশের সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যায়ক্রমে এমপিওভুক্ত করার প্রচেষ্টা প্রয়োজন।