রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে গুম ভয়ংকর অস্ত্রে পরিণত হয়েছিল। পতিত স্বৈরাচারের আমলে বিভিন্ন দলমতের অসংখ্য ব্যক্তি এর শিকার হন। এঁদের অনেকেই নিহত হয়েছেন। জুলাই বিপ্লবের পর হাতে গোনা ভাগ্যবান কিছু ব্যক্তি পাঁচ-দশ বছর পর্যন্ত আয়নাঘরের অন্ধকার কুঠরিতে চরম অনিশ্চয়তার মানবেতর জীবন কাটিয়ে পৃথিবীর স্বাভাবিক আলোবাতাসে ফিরে এসেছেন। মুক্ত হয়ে তাঁরা যেন দ্বিতীয় জীবন লাভ করেছেন। এই বর্বর রাজনৈতিক চর্চার অবসান ঘটাতে সোমবার রাতে গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। তাতে গুমের শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সঙ্গে অর্ধকোটি টাকা অর্থদণ্ডেরও বিধান রয়েছে। তবে গুমের ফলে মৃত্যু হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। অর্থদণ্ড কোটি টাকা। এ আইনে গুমের আদেশ বা অনুমতি দানকারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা কমান্ডারদেরও সমান শাস্তি হবে। অধস্তনদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলেও সমান দণ্ড ভোগ করতে হবে। অধ্যাদেশে গুমের অপরাধ জামিন ও আপস অযোগ্য। গুমের বিচারে জেলা পর্যায় পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলা হয়েছে। শুধু জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতেও অপরাধ আমলে নিয়ে বিচার করতে পারবেন ট্রাইব্যুনাল। গুমের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারী বা আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য যদি কাউকে আটক, গ্রেপ্তার, অপহরণ বা স্বাধীনতা হরণ করার পর বিষয়টি অস্বীকার করেন, এবং ওই ব্যক্তির অবস্থান, অবস্থা ও পরিণতি গোপন রাখেন; আর তাতে তিনি আইনগত সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হন- তাহলে কাজটি গুম হিসেবে সংজ্ঞায়িত এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে। নাগরিকের স্বাভাবিক জীবনাচার এবং জীবন রক্ষায় এ এক যুগান্তকারী আইন রচিত হলো। যে ন্যায্যতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক নিরাপত্তা ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য, স্বাধীনতাসংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দলের দ্বারাই তা সবচেয়ে লঙ্ঘিত-পদদলিত হয়েছিল। বর্তমান অধ্যাদেশে তা ফিরে আসার পথ শুধু নয়, বাধ্যতা তৈরি হলো। এখন এ আইনে বিগত দিনের সব গুম-খুনে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার হোক। হুকুমদাতা থেকে জড়িত সবার দ্রুত বিচার এবং দণ্ড কার্যকর হোক। এ দৃষ্টান্তে আগামী দিনে দেশে গুম-খুনের অপরাধে আর কেউ দুঃসাহসী হবে না।