এইচআইভি কথাটির অর্থ হলো হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস। আর এইডস এর অর্থ হলো অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনো ডেফিয়েন্সি সিনড্রোম অর্জিত প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাবজনিত রোগসমূহ। ১৯৮০-৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন কয়েকজন সমকামীর মধ্যে একধরনের নতুন নিউমোনিয়ার দেখা পায়। পরবর্তীকালে তাদের মধ্যে একধরনের ক্যানসার লক্ষ করা গেল। ইতোমধ্যে ইনজেকশনের মাধ্যমে নতুন নেশার ওষুধ ব্যবহার করেন এমন কয়েকজনের মধ্যে একধরনের উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। ১৯৮৩ সালে সম্পূর্ণ নতুন প্রকার ভাইরাস আবিষ্কৃত হলো, যা আজকের মরণ ভাইরাস এইচআইভি। ১৯৮৫ সালে এ রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষার নাম এলিজা আবিষ্কৃত হয়। ২০১০ সালের ডিসেম্বরের হিসাব অনুযায়ী পৃথিবীতে ৪৫০ লাখ লোক এইচআইভি/এইডসে আক্রান্ত।
পৃথিবীর সর্বত্রই এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। দেখা গেছে, এ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ৪৯। ৩২ শতাংশের হার ১৫-২৯ বছর বয়সের পুরুষ-মহিলা। এ রোগে ধনী-গরিব, শিশু-বয়স্কনির্বিশেষে সমাজের যে কোনো বয়সের ব্যক্তি যে কোনো মুহূর্তে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে পুরুষেরা বেশি আক্রান্ত হন। তুলনামূলকভাবে
মহিলাদের থেকে ৭০ শতাংশের বেশি আক্রান্ত হন পুরুষ। এইডস হলো একটি ভাইরাসঘটিত রোগ। ভাইরাসের নাম হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস। এ-জাতীয় ভাইরাসটির প্রথমে নাম রাখা হয় এলএভি বা লিস্ফ্যাভিনোপ্যাথি আসোসিয়েটেড ভাইরাস। তারপর নাম হয় এইচটিএলভি-৩ বা হিউম্যান টি লিস্ফোসাইট ভাইরাস-৩। ১৯৮৬ সালের মে মাসে এর নাম হলো এইচআইভি। এ ভাইরাসের ব্যাস হলো এক মিলিমিটারের ১০ হাজার ভাগের ১ ভাগ।
এ ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে, বীর্যে, স্পাইনাল ফ্লুইডে লুকায়িত থাকে। এ ছাড়া খুব কম মাত্রায় চোখের পানি, লালা, স্তনদুগ্ধ, মূত্র, জরায়ুতে থাকে। যৌন সংসর্গ এবং রক্ত ও রক্তজাত পদার্থের মাধ্যমে, গর্ভবতী মায়ের শরীর থেকে শিশুতে এ রোগ সংক্রমিত হতে পারে। প্রথমে জ্বর, গলাব্যথা, শরীরের চামড়ার মধ্যে দাগ দেখা দেয় ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে। অনেকের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর কোনো উপসর্গ না-ও থাকতে পারে। তারা সাধারণত নীরোগ মানুষের মতো প্রথমত উপসর্গহীন থাকতে পারেন এবং স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের অধিকারী থাকেন, যদিও তারা এ রোগ বহন করে অন্যকে সংক্রমণ করতে সক্ষম। একবার সংক্রমিত হলে সারা জীবন সংক্রমিত থাকেন।
এ রোগে আক্রান্ত রোগীর রক্ত যদি কোনো সুস্থ ব্যক্তির রক্তের সান্নিধ্যে আসে, সে ক্ষেত্রে সুস্থ ব্যক্তির রক্তে এর জীবাণু প্রবেশের সম্ভাবনা থাকে ১০০ ভাগ। এইডস একটি কালান্তক রোগ। এ রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। এইডস থেকে মুক্তির সম্ভাবনা যেহেতু নেই সে ক্ষেত্রে এ রোগে যাতে আক্রান্ত হতে না হয় সেদিকে বেশি যত্নশীল প্রয়োজন। এ রোগকে প্রতিহত করতে হলে রক্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত রক্ত পরীক্ষা করার পর এইআইভি মুক্ত প্রমাণিত হলে কেবল সে রক্ত গ্রহীতাকে দেওয়া যাবে। সংক্রমিত পুরুষ বা মহিলার যৌনমিলন এড়িয়ে চলতে হবে। ইনজেকশন নেওয়ার সময় একবার ব্যবহারযোগ্য সিরিঞ্জ ও সুচ ব্যবহার করতে হবে। কোনো সুস্থ লোকের কাটা বা ছেঁড়া জায়গায় যেন এইডস রোগীর রক্ত বা তদরূপ কোনো সংক্রমণ ছড়াতে না পারে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি দাঁত তোলার সময় সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত না করে অন্য সুস্থ ব্যক্তির শরীরে সেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যাবে না। সুস্থ ব্যক্তির মুখে ঘা থাকলে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে চুম্বন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আক্রান্ত ব্যক্তির দাড়ি কাটার পর সে ক্ষুর অন্য কারও মুখে লাগানো যাবে না। উল্কি করা, কান বা নাক বাঁধানোর ব্যবহৃত সুচ অন্য কারও ক্ষেত্রে ব্যবহার করা অনুচিত। এ রোগে শিকার না হওয়ার জন্য যা প্রয়োজন বিশেষ করে বিয়ের আগে নারী-পুরুষের কাউন্সেলিং অত্যন্ত জরুরি। সবশেষে এইডস সচেতনতা গড়ে তুলতে সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগ নিতে হবে। তবে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললে এ রোগের আক্রমণ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
লেখক : প্রাবন্ধিক