রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনার জন্য যে কর্মকর্তাদের নির্বাচন করা হয়, তাদের মানসিক দৃঢ়তা, দায়িত্ববোধ, আইনের প্রতি আনুগত্য এবং রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তকে সম্মান করার সক্ষমতাই একটি সুস্থ প্রশাসনের ভিত্তি। এ কারণে প্রজাতন্ত্রের জন্য একজন প্রশাসকের গঠনমূলক পথচলা শুরু হয় ঠিক যোগ্যতা প্রমাণের পরীক্ষার হলেই যেখানে তার শৃঙ্খলা, প্রস্তুতি, নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধ প্রথমবারের মতো পরীক্ষিত হয়। এমন বাস্তবতায় আসন্ন বিসিএস পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে সাম্প্রতিক আন্দোলন শুধু অযৌক্তিকই নয়, বরং এটি ভবিষ্যৎ আমলাতন্ত্রের নৈতিক চরিত্র ও প্রশাসনিক মানসিকতার উপযুক্ততার বিষয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যারা দেশের সেবায় নিয়োজিত হতে চান, তাদের কাছ থেকে প্রথম প্রত্যাশাই হলো নিয়ম মানা ও দায়িত্বশীলতা। অথচ পরীক্ষার আগে থেকেই যদি তারা অজুহাতসন্ধানী মানসিকতার পরিচয় দেন এবং দায়িত্ববর্জিত আচরণ করেন, তবে পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র তাদের কাছ থেকে নাগরিকের কল্যাণ, সুশাসন বা আইনের প্রতি আনুগত্য কীভাবে আশা করবে? প্রকৃতপক্ষে যে রাষ্ট্রে সরকারি চাকরি প্রার্থীরাই নিয়ম ভাঙার সংস্কৃতি তৈরি করে, সেখানে প্রশাসন ভঙ্গুর হয় এবং রাষ্ট্রযন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে।
রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য শুধু চাকরির শর্ত নয়; এটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার মৌলিক নৈতিক শপথ। তাই ভবিষ্যৎ প্রশাসকের গঠনমূলক পথচলা শুরু হয় নির্বাচনি পরীক্ষার হলেই, যেখানে প্রথমবারের মতো পরিমাপ করা হয় তার শৃঙ্খলা, প্রস্তুতি, আত্মনিয়ন্ত্রণ, নৈতিকতা, নীতির প্রতি আনুগত্য এবং রাষ্ট্র ও জনগণের প্রতি কর্তব্যবোধ। এই পর্যায়ের ব্যর্থতা বা দায়িত্বহীনতা পরবর্তী জীবনে বড় ধরনের প্রশাসনিক অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারে রূপ নিতে পারে। এই বাস্তবতায় আসন্ন বিসিএস পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে সাম্প্রতিক আন্দোলন শুধু অযৌক্তিকই নয়; বরং এটি প্রজাতন্ত্রের ভবিষ্যৎ আমলাতন্ত্রের নৈতিক চরিত্র নিয়েই প্রশ্ন তোলে।
যারা রাষ্ট্র ও নাগরিকের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করতে চান, তাদের কাছ থেকে প্রথম প্রত্যাশাই হলো নিয়ম মানা, আত্মনিয়ন্ত্রণ, সংকট মোকাবিলার সক্ষমতা এবং দায়িত্বশীল আচরণ। অথচ নিয়োগ পরীক্ষার আগেই যদি তারা দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া, অজুহাত তৈরি করা বা রাষ্ট্রের নির্ধারিত সময়সূচিকে অমান্য করার প্রবণতা প্রদর্শন করে, তবে ভবিষ্যতে তারা সুশাসন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা বা জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রচিন্তা কতটা ধারণ করতে পারবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকেই যায়।
আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তায় ম্যাক্স ওয়েবারের বর্ণিত ‘যৌক্তিক আইনি কর্তৃত্ব’ ঠিক এই নীতিতেই দাঁড়ানো, যেখানে রাষ্ট্রের কর্মকর্তারা নিয়ম মেনে চলবেন এবং ব্যক্তিগত আবেগ নয় বরং যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। কিন্তু ‘গোড়ায় গলদ’ অর্থাৎ যারা শুরুতেই নিয়ম অমান্য করার সংস্কৃতি দিয়েই সরকারি প্রশাসনে জায়গা করে নিতে চায়, তারা সরকারের প্রত্যাশিত জনবান্ধব কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক একটি প্রশাসনিক চরিত্র গড়ে তোলে, যা রাষ্ট্রের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিকর। বিসিএস কেবল একটি সাধারণ চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা নয়; এটি প্রজাতন্ত্রের প্রশাসন পরিচালনার জন্য যাদের ওপর জনস্বার্থের সবচেয়ে সংবেদনশীল দায়িত্ব অর্পিত হবে, তাদের নির্বাচন প্রক্রিয়া। তাই যদি ভবিষ্যৎ কর্মকর্তারাই আন্দোলনের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়সূচি বদলাতে সক্ষম হন, তবে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রশাসন ভবিষ্যতে কাদের হাতে পরিচালিত হবে সেই প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা এখনই রাস্তায় নেমে কৃত্রিম চাপ সৃষ্টি করে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করাতে সক্ষম হন, তাদের ভবিষ্যৎ প্রশাসনিক মনোভাব কেমন হবে, তা অনুমান করা কঠিন নয়।
রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্বশীলতা, নিরপেক্ষতা, পেশাদারত্ব ও নিয়মশৃঙ্খলা একটি জনবান্ধব আমলাতন্ত্রের ন্যূনতম পূর্বশর্ত; অথচ এ ধরনের চাপ সৃষ্টি ও নিয়মভঙ্গের মাধ্যমে তারা ঠিক সেই কাঠামোকেই দুর্বল করে দেয়। জনপ্রশাসনবিদরা দেখিয়েছেন যে নিয়মের প্রতি অবজ্ঞা, কর্তৃত্বের প্রতি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যক্তিগত ইচ্ছার আধিপত্য মিলিত হয়ে যে ‘অকর্মণ্য ও অথর্ব আমলাতন্ত্র’ তৈরি করে, তার শিকড় থাকে কর্মকর্তাদের প্রাথমিক চরিত্র গঠন ও নৈতিক মূল্যবোধে। আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের ওপর জনপ্রশাসনের যে আমলাতান্ত্রিক আধিপত্যবোধ বা ‘কর্তৃত্বের মনস্তত্ত্ব’ দৃঢ় হয়েছে, তার মূলে রয়েছে অসংযত, নিয়ম অমান্যকারী প্রাথমিক মনোবৃত্তি ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আইনের শাসনের অভাব। রাষ্ট্রের চাকরিতে প্রবেশের আগেই যারা সরকারি সিদ্ধান্ত বা নিয়মনীতি পরিবর্তনের দাবি তোলে এবং চাপ প্রয়োগকে তা আদায়ের হাতিয়ার বানায়, তারা ক্ষমতায় গেলে আরও বড় পরিসরে একই আচরণের পুনরাবৃত্তি করবে এটাই স্বাভাবিক পরিণতি। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যে সমাজে নিয়মভঙ্গকারীরা নিয়ম নির্ধারণ করতে শুরু করে, সেখানে আমলাতন্ত্র জনস্বার্থ থেকে বিচ্যুত হয়ে ব্যক্তিস্বার্থ, গোষ্ঠীস্বার্থ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দিকে ধাবিত হয়। নিকট অতীতে তার অসংখ্য নজির দেখা গেছে। শুরুতেই যারা নিয়মকে অগ্রাহ্য করে, তারা ভবিষ্যতে জনগণের ওপর কেমন আচরণ ও কর্তৃত্ব আরোপ করবে, তা সহজেই অনুমেয়।
জনস্বার্থ বিঘ্নকারী কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে রাষ্ট্র ও জনগণের সেবার দায়িত্ব অর্পণ করা শুধু অনুচিতই নয়, এটি রাষ্ট্রনীতি ও পেশাগত নৈতিকতার সরাসরি পরিপন্থি। রাস্তা অবরোধ, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি, প্রশাসনিক সময়সূচি অমান্য করা বা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী ক্ষমতাকে চাপের মুখে ফেলে দেওয়া; এসব আচরণের সঙ্গে পেশাগত নৈতিকতার কোনো সম্পর্ক নেই। একজন সরকারি কর্মচারী বা কর্মকর্তার প্রথম শিক্ষা হওয়া উচিত জনস্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া এবং সর্বাবস্থায় প্রজাতন্ত্রের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখা। কিন্তু যারা নিজেদের সুবিধাকে রাষ্ট্রীয় স্বার্থের ওপরে স্থান দেয়, তাদের ভবিষ্যৎ নিরপেক্ষতা, ন্যায়বোধ বা প্রশাসনিক সততা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে একটি মৌলিক নীতি হলো, যে ব্যক্তি জনস্বার্থের বিরোধিতা করে, সে কখনোই জনসেবার প্রকৃত দায়িত্ব গ্রহণের যোগ্যতা রাখে না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিককে অযথা কষ্ট দেওয়া বা জনজীবন অচল করে দাবি আদায় করা ‘অনৈতিক ও সামাজিক বিরোধী আচরণ’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা সরকারি কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের মৌলিক পেশাগত নৈতিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফলে যারা জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী তৎপরতায় যুক্ত, তাদের সরকারি নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়া তো নয়ই, বরং রাষ্ট্রীয় চাকরির প্রার্থিতা থেকে অযোগ্য ঘোষণা করাই নৈতিক ও আইনসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি। কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে, এটি ভবিষ্যতের প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ও সরকারি চাকরিপ্রার্থীদের নৈতিক চরিত্র গঠনের একটি প্রত্যয়ী পদক্ষেপ।
যে কোনো প্রশাসন দুর্বল হয় তখনই, যখন অযোগ্যরা নানা পদে জায়গা করে নেয় ও ক্ষমতাধর হয়ে ওঠে। ইতিহাস ও প্রশাসনতত্ত্ব মতে রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা ভেঙে যায় সেই মুহূর্তে, যখন নৈতিকভাবে অযোগ্য, দায়িত্বহীন কিংবা জনবিরোধী আচরণকারীরা রাষ্ট্রযন্ত্রে প্রবেশ করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার সুযোগ পায়। এ কারণেই প্রজাতন্ত্রের স্বার্থে পেশাগত নৈতিকতার বিরোধী আচরণ বরদাশত না করা একটি অনিবার্য রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। নিয়মশৃঙ্খলা ভেঙে সুবিধা আদায়ের সংস্কৃতি যে কোনো রাষ্ট্রের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিকর এবং সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত। বাংলাদেশ বহু বছর ধরে ‘চাপ প্রয়োগ করে দাবি আদায়’ নামে একটি অস্বাস্থ্যকর রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কৃতির ভুক্তভোগী; যখন তখন রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত, নিয়মনীতি বা পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তনের দাবিতে রাস্তা দখল, দাবি আদায়ের নামে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি বা বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। এই বিপজ্জনক সংস্কৃতি যদি বিসিএস পরীক্ষার্থীদের মধ্যেও প্রবেশ করে, তবে ক্ষতির পরিমাণ আরও ভয়াবহ হবে, কারণ এটি সরাসরি দেশের রাষ্ট্রযন্ত্রের ভবিষ্যৎ প্রশাসনিক মেরুদণ্ডকেই দুর্বল করে দেবে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায়, রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা যদি জনস্বার্থবিরোধী চাপের সামনে বারবার নতি স্বীকার করে, তাহলে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন জনগণের প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিকে থাকতে পারে না; বরং তা পরিণত হয় ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থসিদ্ধির যন্ত্রে। তাই চাপ প্রয়োগ করে নির্ধারিত সময়সূচি পরিবর্তনের দাবি আদায়ের এই প্রবণতা শুধু একটি বিসিএস পরীক্ষার বিষয় নয়; এটি রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার মূল দার্শনিক ভিত্তির ওপর আঘাত।
এখন প্রশ্ন হলো, এ ক্ষেত্রে সরকারের করণীয় কী? প্রথমত যোগ্য, নৈতিক ও দায়িত্বশীল প্রশাসন গঠনে রাষ্ট্রকে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতেই হবে। সুতরাং নিয়োগ পরীক্ষার সময়সূচি যেমনভাবে ঘোষণা করা হয়েছে, তা কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে বজায় রাখা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। কারণ সময়সূচি পরিবর্তন মানে পেশাগত নৈতিকতার ভিত্তিতে আঘাত এবং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে শিথিলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। দ্বিতীয়ত যারা পরীক্ষার নামে সড়ক অবরোধ, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি বা নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া অস্থিতিশীল করবে, তাদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, যাতে এটি কেবল শাস্তি নয়, রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। তৃতীয়ত পেশাগত নৈতিকতাবিরোধী এ ধরনের কর্মকাণ্ডে যুক্ত ব্যক্তিদের ভবিষ্যতে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণে অযোগ্য ঘোষণার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা যেতে পারে।
পৃথিবীর বহু দেশেই নীতিনৈতিকতা অনুসরণে কঠোরতা বজায় রাখা হয়; জনদুর্ভোগ সৃষ্টি বা রাষ্ট্রবিরোধী আচরণে জড়িতদের সরকারি চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় ভবিষ্যৎ আমলাতন্ত্রে পেশাগত নৈতিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপনের স্বার্থে। সরকারের দৃঢ় অবস্থান সমাজে বার্তা দেয় যে রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত চাপ বা বিশৃঙ্খলার ওপর নয়, বরং নিয়ম, দায়িত্ববোধ ও যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এতে ভবিষ্যৎ প্রশাসকরা বুঝতে শেখেন যে রাষ্ট্রসেবা কোনো সুবিধা আদায়ের ক্ষেত্র নয়; এটি তাদের নৈতিক দায়িত্ব, শৃঙ্খলা ও জনকল্যাণের অঙ্গীকার।
রাষ্ট্রসেবা শুধু চাকরির সুযোগ নয়; এটি পেশাগত নৈতিকতা, মানসিক দৃঢ়তা ও জনগণের প্রতি আজীবন দায়বদ্ধতার পরীক্ষা। বিসিএস পরীক্ষার্থীরা ভবিষ্যতের প্রশাসনিক নেতৃত্ব দেবে, তাই তাদের প্রতিটি আচরণকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিতে হবে। মনে রাখতে হবে যে পরীক্ষার সময়সূচি পেছানোর অযৌক্তিক দাবি, রাস্তায় নেমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি বা নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া চাপে ফেলার প্রয়াস দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রকাঠামোকে দুর্বল করে। জনবান্ধব প্রশাসনের পূর্বশর্ত হলো নীতিনিষ্ঠা, শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা, দায়িত্ববোধ ও আইনের প্রতি আনুগত্য। দায়িত্বের শুরুতেই নিয়ম ভঙ্গকারীদের কাছে রাষ্ট্রযন্ত্রের জনপ্রশাসনের নেতৃত্ব প্রত্যাশা করা অবান্তর। রাষ্ট্রকে শক্তিশালী ও জনবান্ধব করতে হলে জনগণের আস্থা রক্ষা করতে সরকারকে তার সিদ্ধান্তে দৃঢ় হতে হবে এবং নিয়মশৃঙ্খলার প্রশ্নে ছাড় না দিয়ে দায়িত্বহীনতা ও জনস্বার্থবিরোধী আচরণের প্রতি কঠোরতা বজায় রাখতে হবে। রাষ্ট্র যখন অনৈতিক আবদার বা চাপের কাছে নতি স্বীকার করে, তখন শুধু একটি সিদ্ধান্ত দুর্বল হয়ে পড়ে না; দুর্বল হয়ে পড়ে ভবিষ্যতের রাষ্ট্রযন্ত্রও। তাই প্রয়োজন একটি সুস্পষ্ট বার্তা প্রদান, রাষ্ট্রসেবায় প্রবেশ করতে হলে নিয়ম মানতে হবে, দায়িত্ব নিতে হবে এবং জনগণের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
এই কঠোরতা কারও ওপর প্রতিশোধ নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ প্রশাসনিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার অঙ্গীকার। শৃঙ্খলা, নৈতিকতা, পেশাদারত্ব ও জনকল্যাণভিত্তিক জনপ্রশাসনই রাষ্ট্রকে আমলাতন্ত্রের জাঁতাকল থেকে মুক্তি দিয়ে টেকসই, ন্যায়ভিত্তিক ও নাগরিকবান্ধব পথে এগিয়ে নিতে সক্ষম। আজকের সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে আগামী দিনের জনপ্রশাসনের চরিত্র- গণ অভ্যুত্থান উত্তর বাংলাদেশে কি গড়ে উঠবে দায়িত্বশীল ও আধুনিক রাষ্ট্রযন্ত্র, নাকি অব্যাহত থাকবে সুবিধাবাদী ও দুর্বল কাঠামো। তাই রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ যেন দায়িত্বহীন কারও হাতে না পড়ে, তা নিশ্চিত করা সরকারের পাশাপাশি প্রতিটি নাগরিকেরও দায়িত্ব। আসুন জনস্বার্থে চাপ প্রয়োগে অযৌক্তিক দাবি আদায়কারীদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হতে উদ্বুদ্ধ ও সহায়তা করি।
লেখক : ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য