দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে এক রোগের চিকিৎসা নিতে গিয়ে বিভিন্ন জীবাণুতে সংক্রমিত হচ্ছে মানুষ। পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে হাসপাতালগুলোর দায়িত্বহীনতা কিংবা সক্ষমতার ঘাটতি এবং রোগী ও স্বজনদের সচেতনতার অভাবে এ মারাত্মক বিপত্তিটা ঘটছে। জীবাণু সংক্রমণে অনেক মানুষের অঙ্গহানি, এমনকি মৃত্যু হচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা যথাযথ পর্যায়ে না থাকায় দেশে হাসপাতালগুলোই যেন হয়ে উঠছে জীবাণুর কারখানা। এ বিপজ্জনক অবস্থা দূর করতে কর্তৃপক্ষকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সংখ্যা বাড়িয়ে, তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক সরঞ্জাম ও উপকরণ দিয়ে তাদের কাজ নিবিড়ভাবে তদারক করতে হবে। জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে তদারককারী ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে। রোগীদের কর্তব্য হওয়া উচিত, কোনো অসুস্থতাকেই অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। হাসপাতালে ভিড় না করে, স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে সেবা নেওয়া। এটা নিজের, অন্য সেবাপ্রার্থী- সবার জন্যই নিরাপদ। হাসপাতালে জীবাণু সংক্রমণের বিষয় নিয়ে কাজ করা গবেষকরা বলছেন, ফাংগাল ইনফেকশন বলতে সাধারণভাবে ত্বক, নখ কিংবা শরীরের বাইরের অংশে ছত্রাক সংক্রমণকে বোঝানো হয়। যে ফাংগাল ইনফেকশন শরীরের ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কিংবা সিস্টেম, যেমন- রক্ত, ফুসফুস, ব্রেন ইত্যাদির ভিতরে ঘটে, সেগুলো সাধারণত সুস্থ মানুষের হয় না। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে গেলে, এ ধরনের জটিল ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। এরকম পরিবেশ-পরিস্থিতিতে ছত্রাকের সংক্রমণ বেশ ভয়াবহ হয়ে থাকে। ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এমনকি আইসিইউতে থাকা নবজাতকদের মধ্যেও ছত্রাক সংক্রমণের হার বেশি লক্ষ করা যায়, যা খুবই দুঃখজনক। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, প্রচলিত ও বহুল ব্যবহৃত অনেক ওষুধ এসব ছত্রাক মেরে জীবন বাঁচাতে ব্যর্থ হচ্ছে। কার্যকর অনেক ওষুধ দুর্মূল্য ও দুষ্প্রাপ্য। ফলে তা অধিকাংশেরই নাগালের বাইরে। এই বাস্তবতায় দেশের হাসপাতালগুলোতে পরিচ্ছন্নতা রক্ষা, সংক্রমণ রোধের পরিবেশ সৃষ্টির ওপর আরও জোর দেওয়া প্রয়োজন। সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা এবং জনসচেতনতা সৃষ্টি-এ দুয়ের কার্যকর সমন্বয়ে ‘জীবাণুর কারখানা হাসপাতাল’ অখ্যাতি থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরি।