অ্যান্টার্কটিকার আকাশে বহু বছর ধরে ঝুলে থাকা বিপদের মেঘে এবার দেখা মিলেছে আশার আলো। নাসা ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাসাগর ও বায়ুমণ্ডল প্রশাসন—নোয়া (NOAA)-এর বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এ বছর ওজোন গর্তের আয়তন উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ৯ সেপ্টেম্বর এটি সর্বোচ্চ ৮.৮৩ মিলিয়ন বর্গমাইলে পৌঁছালেও আগের অনেক বছরের তুলনায় আকারে ছোট। এটা ১৯৯২ সালের পর পঞ্চম ক্ষুদ্রতম গর্ত।
বিজ্ঞানীদের মতে, এই ইতিবাচক পরিবর্তনের বড় কারণ ‘মন্ট্রিল প্রটোকল’। ওই আন্তর্জাতিক চুক্তিতে ওজোন ধ্বংসকারী রাসায়নিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। এসব রাসায়নিক মূলত ক্লোরিন ও ব্রোমিনযুক্ত যৌগ, যা আগে স্প্রে, ফোম, রেফ্রিজারেটর ও এয়ার কন্ডিশনারে বহুল ব্যবহৃত হতো। এগুলো বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তর ‘স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার’এ উঠে ওজোনকে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত করত।
নাসার ওজোন গবেষণা দলের প্রধান বিজ্ঞানী পল নিউম্যান বলেন, ২০০০ সালের তুলনায় এখন গর্তের আয়তন স্পষ্টভাবে ছোট হচ্ছে। তবে ১৯৮০-এর দশকের অবস্থায় ফিরতে আরও সময় লাগবে। তিনি জানান, যদি বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তাহলে এ শতাব্দীর শেষ দিকে ওজোন স্তর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে।
এ বছর ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ওজোন ক্ষয়ের মৌসুমে গর্তের গড় আয়তন ছিল ৭.২৩ মিলিয়ন বর্গমাইল। সাধারণ সময়ের তুলনায় প্রায় তিন সপ্তাহ আগে গর্ত ভেঙে যেতে শুরু করেছে, যা ইতিবাচক ইঙ্গিত বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
নোয়া–এর সিনিয়র বিজ্ঞানী স্টিফেন মন্টজকা জানান, ২০০০ সালের পর থেকে ওজোন–ধ্বংসকারী পদার্থের পরিমাণ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। তার ভাষায়, যদি ২৫ বছর আগের মতো ক্লোরিন থাকত, তাহলে এ বছরের ওজোন গর্ত কমপক্ষে আরও এক মিলিয়ন বর্গমাইল বড় হতো।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে ৭ থেকে ৩১ মাইল ওপরে থাকা ওজোন স্তর সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে প্রাণীজগতকে রক্ষা করে। তাই এই স্তর পুনরুদ্ধারের অগ্রগতি বিশ্বব্যাপী এক বড় স্বস্তির খবর।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল