বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল সর্বস্তরের মানুষ। ছাত্র-কৃষক-সাংস্কৃতিক কর্মী-সাধারণ মানুষ সবাই। সাধারণ মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য দিয়ে, অর্থ দিয়ে, আশ্রয় দিয়ে সহযোগিতা করেছে। সাংস্কৃতিক কর্মীরা মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যার্থে তহবিল গঠন করেছেন, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ও ক্যাম্পে গিয়ে গান গেয়ে তাদের মনোবল জোগাতে চেষ্টা করেছেন। মুক্তির গান হলো সাংস্কৃতিক কর্মীদের অবদানের তেমনই একটি দলিল। এটি একটি প্রামাণ্যচিত্র। এটি ১৯৯৫ সালে মুক্তি পায়। পরিচালনা করেছেন তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ। মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা লিয়ার লেভিন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের অভিপ্রায়ে এ দেশের একদল সাংস্কৃতিক কর্মীর সঙ্গ নেন। বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা নামের দলের এই সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের দেশাত্মবোধক ও সংগ্রামী গান শুনিয়ে উজ্জীবিত করতেন। এই শিল্পীদের সঙ্গে থেকে লেভিন প্রায় ২০ ঘণ্টার ফুটেজ সংগ্রহ করেন। যুদ্ধের শেষ দিকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান। আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তিনি ডকুমেন্টারি তৈরি করতে পারেননি। দীর্ঘ দুই দশক পর ১৯৯০ সালে তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ নিউইয়র্কে লেভিনের কাছ থেকে এই ফুটেজ সংগ্রহ করেন। এ থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য তারা আরও বিভিন্ন উৎস থেকে মুক্তিযুদ্ধের নানা সংরক্ষিত উপাদান সংগ্রহ করেন, ২০ বছর আগের সেই শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। লেভিনের কাছ থেকে প্রাপ্ত ফুটেজের সঙ্গে সংগৃহীত অন্যান্য উপাদান যোগ করে ছবিটি নির্মিত হয়।