ঢাকায় নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের কাহিনিনির্ভর অন্যতম ছবি ‘মেঘের অনেক রং’। ছবিটিকে বলা হয়, ‘যুদ্ধবিহীন মুক্তিযুদ্ধের ছবি’। কারণ ছবিটিতে কোনো যুদ্ধ দেখানো হয়নি। গল্পের প্রয়োজনে শুধু স্মৃতিতে উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধের খণ্ডচিত্র। ১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি পরিচালনা করেন হারুন অর রশীদ। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ১৯৭৬ সালে সেরা সিনেমা, পরিচালক, সংগীত পরিচালক (ফেরদৌসী রহমান), চিত্রগ্রাহক (হারুন অর রশীদ) ও শিশুশিল্পী (মাস্টার আদনান) বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায় ছবিটি।
একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ নির্ভরতায় এ পর্যন্ত বাংলাদেশের যে ছবিগুলো নির্মিত হয়েছে তার মধ্যে শিল্প-সামর্থ্যে ‘মেঘের অনেক রং’ বিশিষ্ট। কারণ বিশ্বাসের পক্ষে হানিকর কোনো অলৌকিক বীরগাথা ছবিটিকে বক্তব্যচ্যুত করেনি। স্বাধীনতা-পরবর্তী একটি তরুণ দম্পতির মধ্যে যখন অতীত এসে ভর করে তখন কিছুক্ষণের জন্য বিপর্যস্ত হয় সেই দম্পতির চলমান জীবন। ‘সুখ তৃপ্তি আর তাদের চোখে-মুখে ডাকটিকিটের মতো লেগে থাকে না’। সেই অতীত সময়টা মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল। যে সময়ে তরুণ ডাক্তার তার স্ত্রীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয় এবং ভালোবেসে পুনর্বিবাহ করে একটি উপজাতি মেয়েকে। ঘটনার ক্রমাগ্রসরতায় তরুণ ডাক্তারের লাঞ্ছিতা স্ত্রী নারী পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে এক সময় তার স্বামীর ঘরে পৌঁছে দেয় তার সন্তানকে এবং নিজে আত্মহত্যা করে। এরপর সেই সন্তানই তাদের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে। এভাবেই অতীতের সঙ্গে বর্তমানের ঘটনা-দুর্ঘটনা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। জীবন বয়ে চলে। ছবির কাহিনি বর্ণনায় কোনো আরোপিত চমৎকারিত্ব নেই। কোনো দুর্বোধ্যতাকেও প্রশ্রয় দেননি পরিচালক। সুবর্ণ চলচ্চিত্রায়ণে তিনি সাধারণ একটা গল্পকে বিশ্বাস-নির্ভর করেছেন ‘মেঘের অনেক রং’-এ। এ ছবির চারটি প্রধান চরিত্রে অভিনয়ে ডা. ওমর এলাহী, রওশন আরা, মাথিন ও শিশুশিল্পী মাস্টার আদনান।