দেশের লাখ লাখ শিশু শিক্ষার্থী যখন বার্ষিক পরীক্ষা শেষে কদিন রুটিন-ভাঙা ভারমুক্ত দিন উদ্যাপনের অপেক্ষায়, তখন তারা পড়ল অনিশ্চয়তায়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের একাংশ বেতন বৃদ্ধিসহ তিন দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছে। বুধবার থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেছেন শিক্ষকরা। এতে গতকাল চতুর্থ দিনের মতো দেশের অনেক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। কোথাও বা প্রধান শিক্ষকরা কোনোমতে পরীক্ষা চালিয়ে নিয়েছেন। গত ২৭ নভেম্বর থেকে কর্মবিরতি শুরু করে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ। তারপর দেওয়া হয় এই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি। শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষাক্রমের ছন্দপতনে অভিভাবকরা বিব্রত শুধু নন, রীতিমতো ক্ষুব্ধ। সবাই স্বীকার করেন যে শিক্ষকদের অনেক সমস্যা-বঞ্চনা আছে, বেতন-পদোন্নতিসহ নানা ক্ষেত্রে তাদের জন্য যথাযথ ন্যায্যতা নিশ্চিত হয়নি। শিক্ষা প্রশাসনের এ ক্ষেত্রে আরও বিবেচক সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন ছিল। এমনকি শিক্ষকদের কর্মবিরতির শুরু থেকেই তারা দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারত। আলোচনা, বোঝাপড়া, কার্যকর আশ্বাসে আশ্বস্ত করে অচলাবস্থা ঠেকানো যেত। অন্যদিকে ‘জাতি গঠনের কারিগর’ বিশেষণে সম্মানিত শিক্ষক শ্রেণি বার্ষিক পরীক্ষার সময়, শিশু শিক্ষার্র্থীদের শিক্ষাজীবন জিম্মি করে আন্দোলনে নামায় অভিভাবক, সচেতন শ্রেণি, বিবেকবান কোনো মানুষই একে দায়িত্বশীল সংগত আচরণ মনে করছে না। তার কোনো কারণও নেই। সেজন্যই শক্ত অবস্থান নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এক বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানিয়েছে, ‘শিক্ষকদের কয়েকটি সংগঠন বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করছে। কোথাও কোথাও পরীক্ষা দিতে আগ্রহী শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়ে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মসূচি সরকারি চাকরি আইন, আচরণ বিধিমালার পরিপন্থি এবং ফৌজদারি আইনেও বিবেচ্য।’ মন্ত্রণালয়, আন্দোলনকারী শিক্ষকদের অবিলম্বে কাজে যোগ দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে। না হলে তাঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে শিক্ষক নেতারা অনড়, অবিচল। বলেছেন, দাবি আদায় ছাড়া তাঁরা আন্দোলন বন্ধ করবেন না। এমন একটা মুখোমুখি অবস্থানে উভয় পক্ষেরই উচিত বিবেক-বিবেচনা, সমঝোতা-সহনশীলতার মাধ্যমে সুষ্ঠু ও সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো। গতকাল বিকালে যখন এ কলাম লেখা হয়, তখন পর্যন্ত কোনো সুখবর ছিল না। আজ পাঠক যখন পড়ছেন, এর মধ্যে উভয় পক্ষের বোধোদয়ে, সমাধান সূত্র বেরিয়ে এলে, তা হবে ইতিবাচক। এবং তাকে সাধুবাদ জানাবে সর্বসাধারণ।