মহান আল্লাহ তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের কল্যাণের জন্য আসমান ও জমিন সবকিছু সৃষ্টি করে সুশৃঙ্খলভাবে সাজিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তিনি এমন, যিনি তোমাদের কল্যাণের জন্য পৃথিবীতে সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা বাকারাহ : আয়াত ২৯) চন্দ্র ও সূর্য মানুষের জীবনের জন্য অপরিহার্য শক্তি। এবং সময় গণনার জন্য এদের ভূমিকা অপরিহার্য। সুরা ইউনুসের ৫ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘তিনি এমন সত্তা যিনি বানিয়েছেন সূর্যকে প্রচণ্ড দীপ্তিময় এবং চন্দ্রকে স্নিগ্ধ আলোকময়। এবং নির্ধারিত করেছেন এর জন্য মঞ্জিল। যাতে তোমরা জানতে পারো বছরের গণনা ও হিসাব।’ সুরা নাহলের ১০ নম্বর আয়াতে বর্ণিত আছে, ‘তিনি সেই সত্তা, যিনি আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন। তোমাদের জন্য রয়েছে তাতে পানীয় এবং সেই পানি থেকে উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়, যাতে তোমরা পশুচারণ কর।’ মানুষের জীবনধারণের জন্য আল্লাহ প্রকৃতিকে নানাভাবে সাজিয়েছেন। আল্লাহ প্রকৃতিকে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।
প্রকৃতি যখন রূঢ়, রুষ্ট ও বিরূপ আকার ধারণ করে, তখন সেটাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে। ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড় অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, দাবানল, শৈত্যপ্রবাহ, দুর্ভিক্ষ, সুনামি ইত্যাদি হলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আল্লাহ বলেন, ‘আমি কি জমিনকে করিনি বিছানাসদৃশ এবং পাহাড়সমূহকে পেরেকস্বরূপ?’ (সুরা নাবা : আয়াত ৬ ও ৭) আল্লাহ আরও বলেন, ‘আর আমিই নির্মাণ করেছি তোমাদের ওপর সাতটি মজবুত আসমান।’ (সুরা নাবা : আয়াত ১২) আল্লাহ আকাশে সূর্য ও ভূমণ্ডলে বরফের পাহাড় সৃষ্টি করে ঠান্ডা ও গরমের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করেন। আকাশে অসংখ্য নক্ষত্র নিজ নিজ কক্ষে ঘুরছে। অথচ সেগুলোর মধ্যে সংঘাত না হয়ে শৃঙ্খলা বজায় থাকে। তাহলে প্রশ্ন জাগে, পৃথিবীতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় কেন হয়? আল্লাহতত্ত্বের জ্ঞানী অলি-আল্লাহগণের মতে, আল্লাহ বান্দাদের বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতি দিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন। বান্দা তাঁর প্রতি আত্মসমর্পিত ও আনুগত্যশীল আছে কি-না? সুরা মূলকের ২ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘তিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, যেন তিনি তোমাদের পরীক্ষা করেন, কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ?’ মূলত মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলস্বরূপ প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘মানুষের কৃতকর্মের কারণে জলে ও স্থলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, যাতে তিনি তাদের তাদের কোনো কোনো কাজের শাস্তি আস্বাদান করান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সুরা রুম : আয়াত ৪১) মানুষের কর্মকাণ্ডের জন্যই প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ নানা রকম বিপদাপদ দেখা দেয়। শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেনসহ নানা গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হয়ে বাতাসে মিশছে। ফলে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। পরিবেশবিজ্ঞানীদের মতে, দেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রধান কারণ জলবায়ুর অনভিপ্রেত পরিবর্তনের মাধ্যমে পরিবেশ বৈরিতা। এর জন্য দায়ী গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রভাব। আল্লাহ বলেন, ‘আর যেসব বিপদ-আপদ তোমাদের ওপর আপতিত হয়, তা তো তোমাদের সহস্তার্জিত কর্মের কারণে এবং অনেক পাপ তো তিনি ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা শূরা : আয়াত ৩০) বান্দা যদি অপরাধের জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে আল্লাহ তাঁর আল গফুর তথা পরম ক্ষমাশীল নামের গুণের বরকতে বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।
পবিত্র কোরআনে ভূমিকম্প সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘বলুন : তিনি সক্ষম তোমাদের ওপর শাস্তি প্রেরণ করতে- তোমাদের ওপর দিক থেকে, অথবা তোমাদের পদতল থেকে।’ (সুরা আনআম : আয়াত ৬৫) মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে সুরা জিলজাল (বাংলা অর্থ ভূমিকম্প) নামে একটি সুরা নাজিল করেন। আমরা যদি আল্লাহর দরবারে ভূমিকম্পের আজাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি এবং আমাদের পূর্ববর্তী ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা চাই, তিনি আমাদের ক্ষমা করে দিতে পারেন। কেননা মহান আল্লাহ দয়াশীল ও ক্ষমাশীল।
লেখক : গবেষক, কদর রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন্স