সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার পৈলনপুর ইউনিয়নের অবহেলিত একটি জনপদ ‘মোবারকপুর’। চারদিকে নদীঘেরা-দেখতে যেন এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। গ্রামের প্রবেশদ্বারে নেই সড়ক বা সেতু।
যুগ-যুগান্তর এ গ্রামের মানুষের ভরসা অস্থায়ী বাঁঁশের সাঁকো আর নৌকা। দীর্ঘদিন ধরে গ্রামবাসী একটি সেতুর দাবী করলেও লাঘব হয়নি এ ভোগান্তির।
সরেজমিন মোবারকপুর গ্রামের যাওয়া হয়। গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সাদীপুর ব্রিজ থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে এ গ্রামের অবস্থান। কুশিয়ারা নদী ও সাদীখালে বেষ্ঠিত গ্রামটিকে দ্বীপের মতোই মনে হয়। প্রত্যান্ত এ গ্রামে মুসলিম-সনাতন মিলে বসবাস শতাধিক পরিবারের। ভোটার সংখ্যা তিনশর ওপরে। এখানের বেশিরভাগই কৃষিজীবী। গ্রামের ভেতরের একমাত্র রাস্তাটিও কাঁচা মাটির।
বছরজুড়েই পানি আর ভরা বর্ষায় টইটুম্বুর হয়ে ওঠে গ্রামের চারপাশ। তখন নৌকাই হয়ে ওঠে একমাত্র ভরসা। শুকনো মৌসুমে যুক্ত হয় সাঁকো। প্রতি বছর প্রায় ১৫ হাজার টাকা ব্যায়ে উপকরণ কিনে গ্রামবাসী তৈরি করেন সাঁকো। সরকারি উদ্যোগ কিংবা স্থায়ী অবকাঠামো না থাকায় তাদের এ কষ্ট যেন নিয়েছে স্থায়ী রূপ। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হররোজ ঝুঁকি নিয়েই করতে হয় যাতায়াত।
গ্রামের বাসিন্দা দিপু বলেন,‘আমাদের গ্রামে যাওয়া-আসা খুবই কষ্টদায়ক। গ্রামের শিক্ষার্থীরা নদীর ওপারে হাইস্কুলে যেতে চায় না ঝুঁকির কারণে।’
রফিকুল ইসলাম মতিউর বলেন, ‘সরকার আসে যায়। আমাদের ভাগ্য পাল্টেনা। একবার বিএনপির নিখোঁজ নেতা এম. ইলিয়াস আলী উনার শেষ নির্বাচনী প্রচারণায় আমাদের গ্রামে এসেছিলেন। তখন, ব্রিজের বিষয়টি আগে অবগত না করায়, নেতাকর্মীদের কঠিন ভাষায় শাসান তিনি। সে দিন বলেছিলেন এখানে ব্রিজ করবেনই। কিন্তু পরে তিনি আর সে সুযোগ পাননি।’
গ্রামের বয়োজ্যৈষ্ঠ খলিলুর রহমান আক্ষেপ করে বলেন, ‘একটা জীবন কাটিয়ে দিলাম এ দুর্ভোগ সঙ্গী করেই। আমাদের অবহেলিত এ গ্রামের দুঃখ আর ঘুচলো না।’
মোবারকপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘শুধুমাত্র একটি ব্রিজের কারণে পুুরো গ্রামটিই অনুন্নত রয়ে গেছে। আমরা ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করি।’
এ বিষয়ে কথা হলে ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়নাল আবেদীন ‘বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মোবারকপুর গ্রামের একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি আমার সাথে কথা বলেছেন। আমরা মনে কনি, জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ হলে, স্থানীয় অধিবাসীরা উপকৃত হবে। আমাদের যে ইঞ্জিনিয়ানিং বিভাগ রয়েছে তাদের বিষয়টি জানাবো, যাতে তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।’
বিডি-প্রতিদিন/আশফাক