বঙ্গোপসাগর উপসাগর হলেও ঝড়ের তাণ্ডবে বরাবরই দাপট দেখিয়ে আসছে। বছরজুড়ে বঙ্গোপসাগর থেকে তেড়েফুঁড়ে আসে একের পর এক ভূমিকম্প। আবহাওয়াবিদরা বলছেন বঙ্গোপসাগর ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকা। গ্রীষ্মের শেষে মে-জুন মাস থেকে শুরু করে শীতের শুরুতে অক্টোবর-নভেম্বর মাস পর্যন্ত সমুদ্রটির উপর একের পর এক ছোটবড় ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়। কোনওটি বিধ্বংসী হয়ে ওঠে, কোনওটি আবার স্থলভাগের কাছাকাছি আসার আগেই শক্তি হারায়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় হওয়ার বিশেষ কারণ রয়েছে। আরব সাগরের ক্ষেত্রে তার অনুকূল পরিস্থিতি নেই।
সম্প্রতি বঙ্গোপসাগর এবং সংলগ্ন অঞ্চলে পর পর দু’টি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের উপকূল থেকে অনেক দূরে দক্ষিণ প্রান্তের এই ঝড়গুলি বিস্তর বিপর্যয় ঘটিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সেনিয়ারকে সরাসরি ‘বিরল’ বলে উল্লেখ করেছে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর। এই ঘূর্ণিঝড়টি ইন্দোনেশিয়া এবং থাইল্যান্ডে তাণ্ডব চালিয়েছে। দুই দেশে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে ৬৫০-এর গণ্ডি। সেনিয়ার শান্ত হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে দানা বাঁধে ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়া। এর প্রভাবে শ্রীলঙ্কায় বিস্তর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থলভাগে আছড়ে না পড়েই ভারতের দক্ষিণের দ্বীপরাষ্ট্রে ৩৫০-জনের বেশি মৃত্যু ঘটিয়েছে দিটওয়া। তার পর ভারতের উপকূলের সমান্তরালে ক্রমে উত্তরে এগিয়েছে এবং শক্তি হারিয়েছে।
বঙ্গোপসাগর তিন দিক ভূমি বেষ্টিত। তাই সমুদ্রে উৎপন্ন হওয়া জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস অন্য কোনও দিকে যেতে পারে না। সাগরে আটকে পড়ে। জলের উপর থাকতে থাকতে বায়ুর শক্তি বাড়ে এবং ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়। ক্রমে তা স্থলভাগে আছড়ে পড়ে। আরব সাগরের উত্তর এবং পূর্ব দিকে স্থলভাগ থাকলেও বাকি দু’দিক খোলা। তাই এখানে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু আটকে পড়ার সম্ভাবনা তুলনামূলক কম।
ঘূর্ণিঝড় তৈরির অন্যতম প্রধান কারণ সমুদ্রের পানির উষ্ণতা। বঙ্গোপসাগরের পানি অনেক বেশি উষ্ণ। এখানে জলের তাপমাত্রা ২৮ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। এর ফলেও ঘূর্ণিঝড় তৈরির সম্ভাবনা বঙ্গোপসাগরে বেশি হয়।
ঘূর্ণিঝড় তৈরির জন্য জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রশান্ত মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগর থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ আর্দ্র বাতাস বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে। আরব সাগরের ক্ষেত্রে তা হয় না। কারণ, তার চারপাশে পশ্চিম এশিয়ার মতো শুষ্ক স্থলভাগ রয়েছে। সেখান থেকে শুষ্ক বায়ু আরব সাগরের উপর আসে। তাতে আর্দ্রতা বেশি থাকে না।
দক্ষিণ-পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বাতাসে তুলনামূলক বেশি প্রভাবিত হয় বঙ্গোপসাগর। এই বাতাস প্রচুর জলীয় বাষ্প বয়ে আনে। মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালি স্বভাবের কারণে গোটা অঞ্চলে আবহাওয়ার পরিস্থিতি অস্থির, অস্থিতিশীল হয়ে থাকে। এর ফলে বাতাসের গতিবিধি বেশি হয়, যা ঘূর্ণিঝড় তৈরির অনুকূল।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল