আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম-নির্যাতনের অভিযোগে মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেডআই খান পান্নাকে অব্যাহতি দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ গতকাল এ আদেশ দেন।
এদিন শুনানির দিন ধার্য থাকলেও হাজির না হওয়ায় ট্রাইব্যুনালের তলবে তাৎক্ষণিক হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি। পরে ট্রাইব্যুনাল তাকে সতর্ক করেন। এরপর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মো. আমির হোসেনকেই ফের নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে গত ২৩ নভেম্বর এ মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্নাকে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল।
গতকাল বেলা পৌনে ১২টায় এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়। প্রথমেই প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। সোয়া ১২টার দিকে শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী জেড আই খান পান্না হাজির না হওয়ায় তাকে তলব করেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল বলেন, আমরা তাকে নিয়োগ দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের কাছে এসে অসুবিধার কথা না বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলা হলো। তিনি কি আসলে কোনো আইন জানেন না। আইনজীবী পান্নার চেম্বারে তাৎক্ষণিকভাবে লোক পাঠিয়ে তাকে দ্রুত আসার জন্য বেঞ্চ অফিসারকে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান। সাড়ে ১২টার পর হুইল চেয়ারে করে ট্রাইব্যুনালে হাজির হন আইনজীবী জেড আই খান পান্না। এ সময় প্রসিকিউশনের শুনানি থামিয়ে পান্নাকে শুনতে চান ট্রাইব্যুনাল। সুস্থ আছেন কি না জানতে চেয়ে তার উদ্দেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনি শেখ হাসিনার পক্ষে নিয়োগ পেয়েছেন। আপনি আসেননি কেন। আপনার অনুপস্থিতিতে শুনানি করতে হয়েছে। চাইলে আবার হবে। জবাবে পান্না বলেন, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। তবে এ মামলায় না দাঁড়ানোর জন্য আমি রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনার ক্লায়েন্ট হাজির হবেন না। আপনিও আসবেন না। আপনি নিজেই আগ্রহ দেখিয়েছেন আইনজীবী হওয়ার জন্য। প্রথমে আপনি নিজে আসেননি, জুনিয়র পাঠিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আপনাকে নিয়োগ দিয়েছি। আপনি না করতে চাইলে ট্রাইব্যুনালে এসে বলতে হবে।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনাকে আমরা সম্মান করি। এ ছাড়া আপনি এক ভিডিও বার্তায় ট্রাইব্যুনাল নিয়ে মন্তব্য করেছেন যে, আপনার ক্লায়েন্ট (শেখ হাসিনা) এ আদালতের বিচার মানেন না। ট্রাইব্যুনালের প্রতি তার আস্থা নেই। এজন্য আপনিও মানেন না। তাহলে আমরা ধরে নেব আপনার সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে। ট্রাইব্যুনাল আইনজীবী পান্নাকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি এটা কোনোভাবেই বলতে পারেন না। জবাবে জেডআই খান পান্না বলেন, আমি নিঃশর্ত ক্ষমা চাইছি।