‘অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে প্রান্তিক মানুষ এখন বেশি ঝুঁকিতে আছেন। তাঁদের মধ্যে আদিবাসী, চা বাগানের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, বেদে, হরিজন, ঋষি, কায়পুত্র, জলদাস, যৌনকর্মী, হিজড়া, বিহারি অন্যতম। তাঁদের অধিকাংশই সমাজে নিগৃহীত, অনেকে নিজেদের দলিত হিসেবে পরিচয় দেন, আবার অনেককে এখনো সমাজে অচ্ছুত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অথচ সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। সবাই সমান অধিকার পেলেই কেবল বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’
গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষ ও পরিবেশ নিয়ে যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (সেড), ব্রাত্যজন রিসোর্স সেন্টার, পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)।
পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সেডের পরিচালক ফিলিপ গাইনের সঞ্চালনায় কর্মশালায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাবেক মহাপরিচালক মো. আবদুল ওয়াজেদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. অশোক কুমার বিশ্বাস, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক প্রশান্ত ত্রিপুরা, ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. জাকির হোসেন রাজু, সাংবাদিক শিশির মোড়ল, চলচ্চিত্র পরিচালক তানিম নূর, কারিতাস বাংলাদেশের প্রতিনিধি কমল গান্ধাই প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রদর্শিত হয় কায়পুত্র ও ঋষিদের ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র এবং মোড়ক উন্মোচন করা হয় সেডের নতুন প্রকাশনার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় সেডের পরিচালক ফিলিপ গাইন জানান, মধুপুরে প্রাকৃতিক শালবন ধ্বংস করে বিদেশি প্রজাতির বাণিজ্যিক চাষের ক্ষতিকর দিক নিয়ে সেড একদম শুরু থেকে গবেষণা, সংবাদ প্রতিবেদন তৈরি, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ এবং গ্রন্থ প্রকাশ করে আসছে।
এসব প্রতিবেদন, প্রামাণ্যচিত্র আন্তর্জাতিক সংস্থার ক্ষতিকর বিভিন্ন প্রকল্প বন্ধে অবদান রেখেছে।
জিল্লুর রহমান বলেন, সেডের যে নতুন প্রকাশনা সেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কী অবস্থান সেটা তুলে ধরেছে। আমরা প্রতিবছর এই প্রকাশনা বের করতে চাই। এটা হবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বার্ষিক খতিয়ান। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীরা যেসব বৈষম্যের শিকার তা আমরা সবসময় তুলে ধরেছি। ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে নজিরবিহীন আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বৈষম্যহীন দেশ গড়ার যে স্বপ্ন তৈরি হয় তাতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীরা যথেষ্ঠ মনোযোগ পাচ্ছে না। অগ্রগতির বিষয়ে সন্তোষ হওয়ার কারণ নেই।
আবদুল ওয়াজেদ বলেন, বাংলাদেশের সব নাগরিকের বাঁচার অধিকার আছে। তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর তরুণদের একটি অংশ কোনো কাজ করে না। তাদের কোনো শিক্ষা নেই, কোনো ট্রেনিং নেই। আমাদের এসব বিষয়ে কাজ করতে হবে।
অশোক কুমার বিশ্বাস বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীরা সবসময় বৈষম্যের শিকার। আমিও সেই জনগোষ্ঠীর একজন সদস্য। বাংলাদেশে পিছিয়ে পড়া যেসব মানুষ আছেন তাদের সবার কাছে উন্নয়ন কর্মীরা পৌঁছাতে পারেন না।
প্রশান্ত ত্রিপুরা বলেন, আমরা মূল ইস্যু থেকে দায়মুক্তি পাচ্ছি না। আমাদের এসব সমস্যা নিষ্পত্তির দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
জাকির হোসেন বলেন, নিম্নবর্গের মানুষের শক্তিহীনতা আগেও যেমন বাস্তব ছিল, এখনো আছে। তানিম নূর বলেন, যারা পিছিয়ে আছে, তাদের পিছিয়ে রাখা হয়েছে। আমাদের তাদের সামনে টেনে আনতে হবে।