খোদ ইউরোপিয়ানরাই যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইউরোপের শত্রু মনে করে তা উঠে এসেছে মহাদেশটির নয়টি দেশের ওপর চালানো জরিপে। এ জরিপে প্রায় অর্ধেক ইউরোপিয়ানই ট্রাম্পকে শত্রু মনে করে। প্যারিসভিত্তিক লু গ্রঁ কঁতিনেঁর চালানো এ জরিপে অনেকে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের বড় ঝুঁকি দেখছে; সংঘাত বাধলে নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিতের ক্ষমতা ইউরোপের দেশগুলোর কম বলে জরিপে অংশ নেওয়া দেশগুলোর বেশির ভাগ নাগরিকই মনে করছে, বলছে গার্ডিয়ান।
যে নয়টি দেশে এ জরিপ চালানো হয়েছে, সেগুলো হলো ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, জার্মানি, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, ক্রোয়েশিয়া, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডস। এ দেশগুলোর যারা জরিপে অংশ নিয়েছে, তাদের ৪৮ শতাংশই ট্রাম্পকে শত্রু মনে করে।
এর মধ্যে বেলজিয়ামে সবচেয়ে বেশি, ৬২ শতাংশ ট্রাম্পকে ইউরোপের শত্রু হিসেবে দেখে। ক্রোয়েশিয়ার ৩৭ শতাংশেরও একই মত। সবচেয়ে কম পোল্যান্ডে, জরিপে অংশ নেওয়া দেশটির মাত্র ১৯ শতাংশ মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বৈরী বিবেচনা করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক, জরিপ সংস্থা ক্লাস্টার১৭-এর প্রতিষ্ঠাতা জঁ-ইভ ডর-মাজঁ বলছেন, ‘ইউরোপবিষয়ক প্রতিষ্ঠান লু গ্রঁ কঁতিনেঁর জরিপে এমন এক ইউরোপের প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে, যেটি উদ্বিগ্ন, নিজেদের দুর্বলতা সম্পর্কে অবগত এবং পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় ভালো ভবিষ্যৎ দেখতে হিমশিম খাচ্ছে।’ ট্রাম্পবাদকে বৈরী মনে করা ইউরোপিয়ানের সংখ্যা যে ক্রমে বাড়ছে তাকেও গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন ডর-মাজঁ; মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ‘না বন্ধু, না শত্রু’ মনে করা লোকের সংখ্যাও আগের তুলনায় কমেছে। ট্রাম্পকে নিয়ে আপত্তি থাকার পরও জরিপে অংশ নেওয়া ৪৮% মানুষ ছাড় দিয়ে হলেও যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার পক্ষে, যা দেখাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক ইউরোপের জন্য এখনো কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আসছে বছরগুলোতে রাশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের যুদ্ধ বাধার আশঙ্কা বেশি বলেও মনে করছে ৫১ শতাংশ, এর মধ্যে ১৮ শতাংশ দেখছে এ আশঙ্কা ‘ব্যাপক’। যুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগ সবচেয়ে বেশি রাশিয়ার সঙ্গে সীমান্ত থাকা দেশগুলোর। মস্কোর সঙ্গে যুদ্ধ বাধার আশঙ্কা প্রকট মনে করছে পোল্যান্ডের ৭৭ শতাংশ। একই ধারণা ফ্রান্সের ৫৪, জার্মানির ৫১, পর্তুগালের ৩৯ আর ইতালির ৩৪ শতাংশের। এ ভয়ের মধ্যে নিজেদের সামরিক সক্ষমতার ব্যাপারে ভরসা আবার সবারই খুবই কম। নয়টি দেশের ৬৯ শতাংশই বলছে, রাশিয়ার হামলার মুখে সুরক্ষা নিশ্চিতের সক্ষমতা তার দেশের ‘খুব একটা’ বা ‘একেবারেই’ নেই। তুলনামূলকভাবে ফরাসিরাই নিজেদের সামরিক সক্ষমতায় অন্যদের তুলনায় বেশি আস্থা রাখছে। তাদের ৪৪ শতাংশ মনে করছে, রাশিয়ার হামলা মোকাবিলা করতে পারবে তারা। অন্যদিকে পোল্যান্ডের ৫৮ শতাংশের নিজেদের সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ আছে। মোটে ১২ শতাংশ ইউরোপিয়ান সামরিক ও প্রযুক্তি থেকে শুরু করে জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তাজনিত হুমকিতে নিজেদের নিরাপদ মনে করছে। সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ রয়েছে প্রযুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা নিয়ে, ২৮ শতাংশ। সামরিক নিরাপত্তাকে ঝুঁকি হিসেবে দেখছে ২৫ শতাংশ ইউরোপীয়। এসব হুমকি মোকাবিলায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ভূমিকার পক্ষে আছে শক্ত সমর্থন, ইউরোপের দেশগুলোর এ জোটকেই সুরক্ষার দায়িত্ব পালনে দেখতে চায় জরিপে অংশ নেওয়া ৬৯ শতাংশ মানুষ। ইইউর সদস্যপদ ধরে রাখার ব্যাপারে সমর্থনও অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। ৭৪ শতাংশই মনে করছে তাদের দেশের ইইউতে থাকা উচিত। পর্তুগাল ও স্পেনে এ হার যথাক্রমে ৯০ ও ৮৯ শতাংশ। পোল্যান্ড আর ফ্রান্সে খানিকটা কম, ৬৮ ও ৬১ শতাংশ। -রয়টার্স