মস্কোয় প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শীর্ষ দূতদের মধ্যে পাঁচ ঘণ্টা ধরে বৈঠক হলেও ইউক্রেন যুদ্ধ অবসান নিয়ে সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির বিষয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র কোনো সমঝোতায় পৌঁছতে পারেনি বলে গতকাল ক্রেমলিন জানিয়েছে। ট্রাম্প বারবার জানিয়েছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাতের অবসান তার বৈদেশিক নীতির অধরা লক্ষ্যগুলোর মধ্যে একটি। এ যুদ্ধের জন্য ট্রাম্প কখনো কখনো পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, উভয়কে তিরস্কার করেছেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে মস্কোয় ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং জামাতা জ্যারের্ড কুশনারের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক চলতে চলতে মধ্যরাত পার হয়ে যায়। এ বৈঠক শেষ হওয়ার পর পুতিনের পররাষ্ট্রবিষয়ক শীর্ষ উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপসের (কোনো পথ) এখনো পাওয়া যায়নি। এখনো অনেক কাজ করতে হবে।’ উশাকভ জানান, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু প্রস্তাবে পুতিন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তবে আলোচনা গঠনমূলক হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার ব্যাপক সুযোগ আছে। উইটকফ আলোচনার পর হোয়াইট হাউসকে সারাংশ জানাতে মস্কোর মার্কিন দূতাবাসে গিয়েছেন বলে জানান তিনি। তিনি আরও জানান, বর্তমানে পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে কোনো বৈঠকের পরিকল্পনা হচ্ছে না। তবে পুতিন ট্রাম্পকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংকেত ও শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন। কোনো পক্ষই তাদের আলোচনার বিস্তারিত গণমাধ্যমের কাছে প্রকাশ করতে রাজি হয়নি। উশাকভ জানান, তারা ‘আঞ্চলিক সমস্যা’ নিয়ে আলোচনা করেছেন। ক্রেমলিন রাশিয়ার দাবির সংক্ষিপ্ত রূপ হিসেবে পুরো দনবাস অঞ্চল দাবি করেছে। ইউক্রেন অঞ্চলটির ৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার নিয়ন্ত্রণ এখনো ধরে রাখলেও রাশিয়া পুরো অঞ্চলটিকে তাদের বলে দাবি করছে। তবে বিশ্বের প্রায় সব দেশই দনবাসকে ইউক্রেনের অংশ বলে স্বীকার করে। উশাকভ বলেন, ‘আমেরিকার কিছু খসড়া প্রস্তাব কমবেশি গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে, তবে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। আমাদের জন্য এমন কিছু প্রস্তাব করা আছে যেগুলো আমাদের উপযুক্ত নয়।’ যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী উইটকফ ১৯৮০-এর দশক থেকে ট্রাম্পের পরিচিত। আর অপর দূত কুশনার ট্রাম্পের কন্যা ইভাঙ্কার স্বামী। তারা মস্কোর রেড স্কয়ার দিয়ে হেঁটে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা ভøাদিমির ইলিচ লেনিনের সমাধি পেরিয়ে ক্রেমলিন ভবনে প্রবেশ করেন। এখানেই তারা দোভাষীর মাধ্যমে পুতিন, উশাকভ ও পুতিনের দূত কিরিল দিমিত্রিভের সঙ্গে কথা বলেন।
সংঘাতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া : ন্যাটোর গোলটেবিল বৈঠকের শুরুতেই কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছেন সংস্থাটির মহাসচিব মার্ক রুটে। তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি মুখোমুখি সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। সেই সঙ্গে দেশটি ন্যাটোর প্রতিরোধ শক্তিকে বারবার পরীক্ষা করছে। সবমিলিয়ে জোট এখন বাস্তব ও দীর্ঘস্থায়ী হুমকির মুখে। রুটে জানান, রাশিয়া যুদ্ধবিমান ও ড্রোন পাঠিয়ে বিভিন্ন দেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে, নাশকতা চালিয়েছে ও গুপ্তচর জাহাজ পাঠিয়েছে ন্যাটোর জলসীমায়। এ আচরণকে তিনি ‘অবিবেচনাপ্রসূত ও বিপজ্জনক’ বলে আখ্যা দেন। তার ভাষায়, রাশিয়া এখন চীন, উত্তর কোরিয়া ও ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে, যার উদ্দেশ্য পশ্চিমা সমাজগুলোতে অস্থিতিশীলতা তৈরি করা ও বৈশ্বিক নিয়মকানুন ভেঙে ফেলা। -বিবিসি
রুটে বলেন, এসবই ইঙ্গিত দেয় যে মস্কো দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি আরও জানান, ন্যাটো সদস্যরা প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়ালেও, সব দেশকে তাদের দায়িত্ব আরও জোরালোভাবে পালন করতে হবে। বিশেষ করে ইউক্রেনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শীত আসছে, রুশ হামলাও অব্যাহত। এমন সময়ে ইউক্রেন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সহায়তার দাবিদার। এদিকে, ‘মিথ্যা শান্তি আলোচনায়’ রাশিয়া ন্যাটোকে বিভক্ত করতে চাইছে বলে মন্তব্য করেছেন জোটভুক্ত একাধিক দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ব্রাসেলসে ইউক্রেন যুদ্ধ ও চলমান ‘শান্তি আলোচনা’ নিয়ে ন্যাটো পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের আগে এমন স্পষ্ট সতর্কতা দেন তারা।